পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোথায় বরিশাল, কোথায় রায়মঙ্গল-অজানা দেশের অজানা কল্পনায় মুগ্ধ মনে কতদিন সে না ভাবিয়াছে, সেও একদিন ওই রকম নেপাল মাঝির বড় ডিঙিটা করিয়া নিরুদ্দেশ বাণিজ্যযাত্রায় বাহির হইয়া যাইবে । ইচ্ছামতী ছিল পাড়াগায়ের গরীব ঘরের মা । তায় তীরের আকাশে-বাতাসের সঙ্গীত মায়ের মুখের ঘুম-পাড়ানি গানের মত শত স্নেহে তার নবমুকুলিত কচি মনকে মানুষ করিয়া তুলিয়াছিল, তার তীরে সে সময়ের কত আকাঙ্ক্ষা, বৈচিত্ৰ্য, রোমান্স, তার তীর ছিল দূরের অদেখা বিদেশ, বর্ষার দিনে এই ইচ্ছামতী কুলে-কুলে ভরা ঢলঢল গৈরিক রূপে সে অজানা মহাসমুদ্রের তীর্যহীন অসীমতার স্বপ্ন দেখিত। ইংরাজি বই-এ পড়া Cape Nun-এর ‘ওদিকের দেশটিা-যে দেশ হইতে লোক আর ফেরে না ; He who passes Cape Nun, will either return or not ; 3.51.3 কুলছাপানো ইচ্ছামতী দেখিয়া তখন সে ভাবিতা-ওঃ, কত বড় আমাদের এই গাঙটা ! এখন সে আর বালক নাই, কত বড় নদীর দু’কুল-ছাপানের লীলা দেখিয়াছে---গঙ্গা, শোণি, বড়দল, নর্মদা-তাদের অপূর্ব সন্ধTা, অপূর্ব বর্ণসম্ভার দেখিয়াছে—সে বৈচিত্ৰ্য, সে প্রখরতা ইচ্ছামতীর নাই, এখন তার চোখে ইচ্ছামতী ছোট নদী। এখন সে বুঝিয়াছে তার গরীব ঘরের মা উৎসব দিনের যে বেশভূষায় তার শৈশব-কল্পনাকে মুগ্ধ করিয়া দিত, এসব বনেদী ঘরের মেয়েদের হীরামুক্তার ঘট, বারানসী শাড়ির রংঢং-এর কাছে তার মায়ের সেই কাচের চুড়ি, শাখা কিছুই নয়। কিন্তু তা বলিয়া ইচ্ছামতীকে সে কি কখনো ভুলিবে ? নদীতে গা ধুইতে গিয়া নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় এই সব কথাই সে ভাবিতেছিল । সারাদিনটা আজ গুমটি গরম, প্ৰতিপদ তিথি-কাল গিয়াছে পূর্ণিমা। আজ এখনি জ্যোৎস্না উঠিবে। এই নদীতে ছেলেবেলায় যে-সব বধূরা জল লইতে আসিত, তারা এখন প্রৌঢ়া, কত নাইও-মরিয়া হাজিয়া গিয়াছে, যে-সব কোকিল। সেই ছেলে Sdò