পাতা:জগতের ইতিবৃত্ত.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ৩৪ } দিগের কিছুই সাদৃশ্য ছিল না। ইহার কৃষিকাৰ্য্য করিত না, মৃগয়াদ্বারাই জীবিকা নির্বাহ করিত। কিন্তু পির ও মেক্সিকো নামে প্রভূত ধন ও পরাক্রমশালী দুই রক্ষদ্রাজ্য ছিল। এই দুই দেশেই কেবল নিয়মিতশাসনপ্রণালী ছিল। পিরার লোকের লিখিতে জানিত । এই দেশের লিপিবদ্ধইতিহাসও এক খানি ছিল। কিন্তু এই উভয় দেশের লোকেরাও ইউরোপীয়দিগের অপেক্ষ অনেকাংশে নিকৃষ্ট ; সুতরাং তাছার ইউরোপীয়দের কর্তৃক সহজেই পরাজিত হইল। ইউরোপীয়ের বিবেচনা করিলেন যে এই সকল দেশ জয় করিয়া তরত্য অধিবাসীদিগকে বধ ও তাছাদের দ্রব্যাদি লুণ্ঠন করা অবৈধ কৰ্ম্ম নহে। পির ও মেক্সিকে তদাপরিজ্ঞাত সকল দেশ অপেক্ষ স্বর্ণে ও রৌপ্যে সমৃদ্ধ ছিল। এই দুই দেশে মূৰ্ত্তিক খনন করিলেই স্বর্ণ ও রৌপ্য পাওয়া যাইত। সুতরাং এই সকল দেশ হইতে স্পেনবাসীরা স্বর্ণ ও রৌপ্য ক্রমাগত ইউরোপে আনয়ন করিতে লাগিলেন। ইছার পূর্বে ইউরোপে যে পরিমাণে রঞ্জত ও কাঞ্চন ছিল তাছার অপেক্ষ অধিক ইহার এই সকল দেশ ছইতে আনয়ন করেন । যে সময়ে স্পেনবাসীরা আটলাণ্টিক মহাসাগরের অপর পারে আমেরিকা অবিস্কৃত করেন প্রায় সেই সময়েই পর্তুগীজের উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়া ভারতবর্ষে আসিবার পথ আবিষ্কার করেন। পর্তুগীজদিগের প্রথম জাহাজ ১৪৯৮ খৃষ্টাব্দে কালিকাটে আইসে। কতিপয় বৎসরের মধ্যে গোআ এবং সিংহলের কিয়দংশ পর্তুগীজদিগের অধিকারভুক্ত হয়। বাঙ্গালায় তাহার হুগলী এবং চট্টগ্রাম অধিকার করিয়াছিলেন। ইউরোপীয়দিগের মধ্যে ইহারাই সর্বপ্রথমে ভারতবর্ষে আইসেন। ইহাদের সন্তানসন্ততি এখন পর্য্যন্তও চট্টগ্রাম, গোআ, কলিকাতা এবং অন্যান্য স্থলে দৃষ্ট হয়। ইংরাজেরা এখন পৰ্য্যন্তও আলমায়রা, কম্পাউণ্ড, পাদরি প্রভৃতি অনেকগুলি পর্তুগীজ শব্দ ব্যবহার করিয়া থাকেন। কিন্তু পর্তুগীজদেগের ক্ষমতা ভারতবর্ষে আর অধিক বিস্তৃত হইল না ; অন্যান্য ইউরোপীয় জাতির ভারতবর্ষে আসিতে লাগিলেন এবং পর্তুগীজদেগের ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস হইতে লাগিল। ১৫১৯ খৃষ্টাব্দে স্পেনবাসীরা কতকগুলি জাহাজ পশ্চিমাভিমুখে প্রেরণ করেন। এই জাহাজ সকল আমেরিকার দক্ষিণ দিয়া (ছরণ অন্তরীপ) এবং পাসিফিকু (স্থির) মহাসাগর পার হইয়। বোণিও দ্বীপে আসিয়া উপস্থিত হয়, এবং তথা হইতে উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়া পুনৰ্ব্বার ইউরোপে ফিরিয়া যায়। ইহার পূৰ্ব্বে তার কোন জাহাজই পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে নাই। পৃথিবী যে গোলাকার ইহা অার এক্ষণেকেহই সন্দেহ করতে পারে না। কিন্তু এই অবিন্ধিয়া দ্বারা লোকের মনের ভাব তখন কতদূর পরিবর্তিত হইয়াছিল তাহ আমরা এক্ষণে বুঝিতে পারি না। এক্ষণে আমরা সকলেই জানি যে পৃথিবী গোলাকার, সকলেই জানি যে কলিকাতা হইতে লণ্ডন বইতে গেলে