তাহার নাই, ভবিষ্যত তাহার অন্ধকার, শহরতলীতে বন-উপবনের বসন্ত আসিলেও জীবনে কবে তাহার যৌবন ছিল তা কি শ্যামার মনে পড়া উচিত? কি অবান্তর তার বর্তমান জীবনে এই বিচিত্র চিন্তা? মুমূর্ষুর কাছে যে নাম-কীর্তন হয়, এ যেন তারই মধ্যে সুর তাল লয় মান খুঁজিয়া বেড়ানো।
জেলের কয়েদী বাপের জন্য যে মেয়ের চোখের জল, তাকে কোলে করিয়া স্বামীর বিরহে সকাতর হওয়া কর্তব্য কাজ, কিন্তু জননী শ্যামা, তুমি আবার ছেলে চাও শুনিলে দেবতারা হাসিবেন যে, মানুষ যে ছি ছি করিবে।
মামা বলে, এইবার উপার্জনের চেষ্টা সুরু করি শ্যামা, কি বলিস?
শ্যামা বলে, কি চেষ্টা করবে?
মামা রহস্যময় হাসি হাসিয়া বলে, দেখ না কি করি। কলকাতায় উপার্জনের ভাবনা। পথে ঘাটে পয়সা ছড়ানো আছে, কুড়িয়ে নিলেই হ’ল।
একটা দুটো ক’রে নোটগুলো বদলানো আরম্ভ করলে হয় না?
তুই ভারি ব্যস্তবাগীশ শ্যামা। থাক না, নোট কি পালাচ্ছে? সংসার তোর অচলও তো হয়নি বাবু এখনো।
হয়নি, হতে আর দেরি কত?
সে যখন হবে, দেখা যাবে তখন, এখন থেকে ভেবে মরিস কেন?
মামার সম্বন্ধে শ্যামা একটু হতাশ হইয়াছে। মামার অভিজ্ঞতা প্রচুর, বুদ্ধিও চোখা, কিন্তু স্বভাবটি ফাঁকিবাজ। মুখে মামা যত বলে কাজে হয়ত তার খানিকটা করিতে পারে, কিন্তু কিছু না করাই তাহার অভ্যাস। কোন বিষয়ে মামার নিয়ম নাই, শৃঙ্খলা নাই। পদ্ধতির মধ্যে মামা হাঁপাইয়া ওঠে। গা লাগাইয়া কোন কাজ করা মামার অসাধ্য, আরম্ভ করিয়া ছাড়িয়া দেয়। নকুড়বাবু ইনসিওরেন্স বেচিয়া খান, তাঁকে বলিয়া কহিয়া শ্যামা মামাকে একটা এজেন্সী দিয়াছিল, মামারও প্রথমটা খুব উৎসাহ দেখা গিয়াছিল, কিন্তু দুদিন দু’একজন লোকের কাছে যাতায়াত করিয়াই মামার ধৈর্য ভাঙিয়া গেল, বলিল, এতে কিছু হবে না শ্যামা, আমাদের সঙ্গে সঙ্গে টাকার দরকার,