পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৯৭

লোককে ভজিয়ে ভাজিয়ে ইনসিওর করিয়ে পয়সার মুখ দেখা দুদিনের কম্ম নয় বাবু, আমার ওসব পোষাবে না। দোকান দেব একটা।

 শ্যামা বলিল, দোকান দেবার টাকা কই মামা?

 মামা রহস্যময় হাসি হাসিয়া বলিল, থাম না তুই, দেখ না আমি কি করি।

 শ্যামা সন্দিগ্ধ হইয়া বলিল, আমার সে হাজার টাকায় যেন হাত দিও না মামা।

 মামা বলিল, ক্ষেপেছিস শ্যামা, তোর সে টাকা তেমনি পুলিন্দে করা আছে।

 সকালে উঠিয়া মামা কোথায় চলিয়া যায়, শ্যামা ভাবে রোজগারের সন্ধানে বাহির হইয়াছে। শহরে গিয়া মামা এদিক ওদিক ঘোরে কোথাও ভিড় দেখিলে দাঁড়ায়, সংএর মত বেশ করিয়া আধ ঘণ্টা ধরিয়া দুটি একটি সহজ ম্যাজিক দেখাইয়া যাহারা অষ্টধাতুর মাদুলি বিষ তাড়ানো ভূত-ছাড়ানো শিকড় বিক্রয় করে, ধৈর্য সহকারে মামা গোড়া হইতে শেষ পর্যন্ত তাহাদের লক্ষ্য করে। ফুটপাতে যে সব জ্যোতিষী বসিয়া থাকে তাদের সঙ্গে মামা আলাপ করে। কোনদিন সে স্টেশনে যায়, কোনদিন গঙ্গার ঘাটে, কোনদিন কালিঘাটে। যে সব ছন্নছাড়া ভবঘুরে মানুষ মানুষকে ফাঁকি দিয়া জীবিকা অর্জন করিয়া বেড়ায় দেখিতে দেখিতে তাদের সঙ্গে মামা ভাব জমাইয়া ফেলে সুখ দুঃখের কত কথা হয়। সাধু নিশ্বাস ফেলিয়া বলে, শহরে যেমন জাঁকজমক রোজগারের সুবিধা তেমন নয়। বড় বেয়াড়া শহরের লোকগুলি। মফঃস্বলের যাহারা শহরে আসে শহরে পা দিয়া তারাও যেন চালাক হইয়া ওঠে। নাঃ শহরে সুখ নাই। মামা বলে, গ্যাঁট হয়ে বসে থাকলে কি শহরে সাধুর পয়সা আছে দাদা, যাও না, শিশিতে জল পূরে ধাতুদৌর্বল্যের ওষুধ বেচ না গিয়ে যত ফেনা কাটবে মুখে তত বিক্রি। পথ মামা রোজই হারায়, সে আরেক উপভোগ্য ব্যাপার। পথ জিজ্ঞাসা করিলে কলিকাতার মানুষ এমন মজা করে। কেউ বিনাবাক্যে গট গট করিয়া চলিয়া যায় কেউ জলের মত করিয়া পথের নির্দেশটা বুঝাইয়া দিতে চাহিয়া উত্তেজিত অস্থির হইয়া ওঠে। মন্দ লাগে না মামার। শহরের পথও অন্তহীন শহরের পথেও অফুরন্ত বৈচিত্র্য