পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১০৮

এখন বাংলা ভুলতে বলো। বাংলা শিখে জীবনে কি হবে? এখন একটু ইংরিজীর দিকে মন দিতে বলো, যদি কিছু উন্নতি করতে চায়। আমি এ সব লিখি ব’লে বাড়ির কেউ সন্তুই নয়।আমি আবার বাড়ির ছোট ছেলে কিনা। আমি যা লিখি দাদারা দেখতে চায়, লিখতে দেখলে বকাবকি করে। বলে, ওর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েচে। ও-সব লিখে মিথ্যে সময় নষ্ট করছে।

 আমি মনে মনে তাদের খুব দোষী করতে পারলাম না একথা বলার জন্যে।

 ছেলেটি আপন মনেই ব’লে যেতে লাগল—এখানে মাস্টারিটা পেয়ে গেলাম, গেজেট যেদিন বার হ’য়েচে, সেই দিনই চাকরি হ’ল আমার। এখানে এসে একা একা বেড়াই; একজনও এমন কেউ নেই যে, দুটো ভাল কথা বলে, কি সৎচর্চা করে। সাহিত্য বিষয়ে কেউ খবরও রাখে না। বড় ব্যাক্‌ওয়ার্ড জায়গা। আপনার সন্ধান পেয়ে ভাবলুম ওঁর কাছে যাই, উনি আমায় লেখা-সম্বন্ধে উপদেশ দিতে পারবেন। তাই এলাম। কারো কাছে উৎসাহ না পেয়ে আমি এমন দমে গিয়েছি, আজ এক বছর লিখিই নি।

 তারপর ছোকরা আমায় বেশ বোঝাবার চেষ্টা করলে, সে বর্তমান সাহিত্যের খবর রাখে বা সে সাধারণ মানুষের পর্যায়ের মধ্যে পড়ে না। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, ইবসেন, শ’, টলষ্টয়, তরুণসাহিত্য, বৈষ্ণব কবিতা—ইত্যাদি হু হু করে মুখস্থ বিদ্যার মতো বলে গেল।

 —আচ্ছা, তরুণ-সাহিত্যবাদের মধ্যে রামচন্দ্র সরকারের লেখা-সম্বন্ধে আপনার মত কি? আমি বিপদে পড়ে গেলুম, তরুণ সাহিত্যবাদের বই কিছু কিছু পড়লেও রামচন্দ্র সরকারের লেখা-সম্বন্ধে আমার কোন ধারণাই নেই। কিন্তু ছেলেটি