বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৯৪

মধ্যে হাঁকচে—ছেলেরা বই দপ্তর নিয়ে স্কুল থেকে ফিরচে—কলে জল পড়বার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে—গলির মোড়ে রোয়াকে-রোয়াকে এরই মধ্যে আড্ডা বসে গিয়েচে—।

 একটা নিতান্ত সরু অন্ধকার গলি, পাশেই একটা মিউনিসিপ্যালিটির নাইবার জায়গা। এই গলিটা দিয়ে যাতায়াত প্রায়ই করি—মিউনিসিপ্যালিটির নাইবার জায়গাটার পাশে একটা খোলার ঘর—এই ঘরখানা ও তার অধিবাসীরা আমার কাছে বড় কৌতূহলের জিনিস। হাত পাঁচেক লম্বা, চওড়াতে ওই রকমই হবে, এই তো ঘরখানা। এরই মধ্যে একটি পরিবার থাকে, স্বামী-স্ত্রী ও দুটি শিশু-সন্তান। না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত, এইটুকু ঘরে কি ভাবে এতগুলি প্রাণী থাকে—তাদের জিনিস-পত্র নিয়ে। কিন্তু সকলের চেয়ে অবিশ্বাসের বিষয় এই যে, ওই পাঁচ বর্গ-হাত ঘরের এক কোণেই ওদের রান্নাঘর। আমি যখন ওখান দিয়ে যাই, প্রায়ই দেখতে পাই—উনুনে কিছুনা-কিছু একটা চাপানো আছে। বৌটি ছোট্ট ছেলে কোলে নিয়ে রাঁধচে, না হয় দুধ জ্বাল দিচ্চে। তার বয়েস দেখলে বোঝা যায় না। তেইশও হতে পারে, ত্রিশও হতে পারে—চল্লিশও হতে পারে। ঘোমটার কাছে ছেঁড়া, আধ ময়লা শাড়ি পরনে। হাতে রাঙা কড় কি রুলি। চোখ মুখ নিষ্প্রভ, নির্বুদ্ধিতার ছায়া মাখানো। স্বামী বোধ হয় কোনো কারখানাতে মিস্ত্রীর কাজ করে, দু’একদিন সন্ধ্যার আগে ফেরবার সময় দেখেচি লোকটা কালি-ঝুলি মেখে ছোট্ট বালতি হাতে পাশের নাইবার জায়গায় ঢুকচে।

 আজও ওদের দেখলুম। দোরের কাছে বৌটি ছেলে কোলে নিয়ে বসে আছে, ছেলেকে আদর করচে। নির্বোধের মতো