বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
২৪

 বুড়ীর অবস্থা দেখে বড় কষ্ট হ’ল। পকেট থেকে একটা টাকা বার করে তার হাতে দিয়ে বললাম—এখন রাখুন ঠাক্‌মা, যখন যা দরকার হয়—আমি যতদিন বাড়ি থাকি, দিয়ে যাব আপনাকে।

 বুড়ী অবাক্ হ’য়ে গেল—আনন্দে বিস্ময়ে সে যেন প্রথমটা বুঝতেই পারলে না—আমি কি তাকে সত্যি একটা গোটা টাকা দিলুম।

 পরের বছর—পুজোর কিছু আগে দেশে গিয়েছি—বুড়ী দেখি আমাদের বাড়ির সামনের বাতাবি লেবুর তলার পথটা দিয়ে যাচ্ছে—হাতে একটা কাঁসার জামবাটি। আমায় দেখে বললে—কখন বাড়ি এলি?

 বললুম—কাল এসেচি ঠাক্‌মা। বাটি হাতে কোথায় গিয়েছিলেন?

 —আর বলিস্‌নে, দাদা! বাটিটা নাপিতবাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম যদি ওরা কেনে। আমার দিন তো আর চলে না, হাতে মোটে পয়সা নেই। সিধু খুলনে গিয়েছে—আজ চার-পাঁচদিন। বাড়ি একেবারে অচল। ছেলেপিলেগুলো খেতে পায় না এমন অবস্থা।

 —তা বাটিটা বিক্রি করে আর ক’দিন যাবে ঠাকুমা?

 —তবু যে ক’দিন যায়। তাও ওরা নিলে না—বলে এখন নগদ দিতে পারব না। ধারে বাটি দিলে আমার কি করে চলে ভাই বলো তো? একটু গুড় খেতে পাচ্ছিনে, বাটিটা বেচে ভেবেছিলাম আজ হাটে আধসের ভালো আকের গুড় আনতে দেব—আর আজকের হাটটাও হবে এখন। ছেলেপিলে শুধু ঝিঙে ভাজা আর ভাত খেয়ে মারা গেল। তা নিবি