বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫
জন্ম ও মৃত্যু 

দাদা বাটিটা!—ফুল কাঁসা, এ ওদের বাটি না। আমার নিজের বাটি——বিয়ের দানে আমার বাবা দিয়েছিলেন, দ্যাখ্ না?

 শহরে থাকি,—অনেক সময় কাঁচা পয়সা রোজগার করি। পাড়াগাঁয়ে যে এত পয়সার কষ্ট তা ভেবে দেখি নে। আমায় অন্যমনস্ক দেখে বুড়ী ভাবলে বোধ হয় বাটি কিনবার ইচ্ছে নেই আমার। অনেকটা মিনতির সুরে বললে—না কিনিস, ওটা বাঁধা রেখে আমায় বরং আট আনা পয়সা দে।

 এ রকম অবস্থায় বুড়ীকে আমি আরও কয়েকবার দেখেছি।

 শুনলাম—বুড়ীর মরণকালে ছেলেরা কেউ আসেনি—বড় ছেলে খুব সেবা-যত্ন করেছিল। বুড়ীর গায়ে একটা লেপ ছিল, মরণের ঘণ্টা দুই আগে বুড়ী পুত্রবধূকে বলেছিল—বৌমা, লেপটা সরিয়ে নাও, চার-পাঁচ টাকা দামের লেপটা—আমি বাঁচব না, তখন ওটা আমার সঙ্গে ফেলে দিতে হবে। ও গেলে আর হবে না বৌমা। আহা, কোথায় পাবে সিধু যে, আবার চারপাঁচ টাকা খরচ ক’রে লেপ বানাবে? শীতকালে বাছারা আমার আদুড় গায়ে কাটাবে তা হ’লে।

 আরও খানিক পরে বুড়ী ছেলেকে ডেকে বললে—দ্যাখ্ সিধু, একটা কথা বলি, শোন্। আমার শ্রাদ্ধে বেশি কিছু খরচপত্র করতে যাসনে যেন। বিধু, মণি, শরৎ ওরা কেউ কিছু হয়তো দেবে না—তুই একা পাবি কোথায় যে খরচ করবি? নমো নমো করে অমনি পাঁচটি ব্রাহ্মণ খাইয়ে দিবি। আর যদি ওরা কেউ কিছু পাঠায়, তাও সব টাকা খরচ করিস্ নে। হাতে কিছু রাখবি,—এর পরে তোর ছেলে-পিলেরা খেয়ে বাঁচবে।

 শুনলাম শশী-ঠাকরুণের ছেলেরা সবাই বাড়ি এসেছে ও খুব ঘটা করে মায়ের শ্রাদ্ধ করছে।