পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫
সই 

ন্যাও, হ’ল তো? কেমন বেশ মিষ্টি? খাও। পাটালির চেয়ে কি বেশি মিষ্টি? দেখি দে তো একটু গালে দিয়ে? কি জানি, এ-সব কখনও দেখিও নি চক্ষে।

 একটু পরে টুলুকে ভাত দিতে তাহার মা রান্নাঘরে চলিয়া গেল। সেই সময়ে শুনিলাম, হাবুল নাকিসুরে বলিতেছে, না, মা, হুঁ। আর তোমারে দেব না। আমি তবে কি খাব?

 হাবুলের মা তাহার সইকে আর পাইল না, কারণ ছেলেকে খাওয়াইয়া স্কুলে পাঠাইয়া দিয়া নিজে ঘরের মধ্যে বিছানায় শুইয়া পড়িয়াছে। অনুপস্থিত সইয়ের উদ্দেশ্যে হাবুলের মা আপন মনে অনেক গল্প করিয়া গেল। খানিক পরে শুনিলাম বলিতেছে—ওই সই, ক’নে গেলে? ঘুমুলে না কি? মোরে আর একটা পান দেবা না?

 কেহ তাহার কথার উত্তর দিল না।

 বেলা তিনটা বাজিয়াছে। আমি বেড়াইতে বাহির হইতে গিয়া দেখি অতিমলিন শাড়ি পরনে এক বাইশ তেইশ বছরের কালো-কোলো মেয়ে একটা চুপড়ি পাশে রাখিয়া ঠিক পৈঁঠার কাছে বসিয়া আছে। তার ছেলেটিও কাছে বসিয়া তখনও গোলাপছড়ি চুষিতেছে। আমাকে দেখিয়া মেয়েটি থতমত খাইয়া মাথায় ঘোমটা তুলিয়া দিল। দুপুরের বিশ্রামের ব্যাঘাত হওয়ায় মনটা বিরক্ত ছিল, একটু রুক্ষ সুরেই বলিলাম—একটু সরে ব’স পথ থেকে। চুপড়িটা রাস্তার ওপর কেন?

 মেয়েটি ভয়ে ও সঙ্কোচে জড়সড় অবস্থায় চুপড়ি সরাইয়া এক পাশে রাখিয়া নিজে যেন একেবারে মাটির সহিত মিশিয়া গেল।

 সন্ধ্যার কিছু আগে উকীলদের ক্লাবে টেনিস খেলিয়া বাসায়