৸৹
আজ তাহা বেদবাক্যের মতই অভ্রান্ত হইয়া উঠিয়াছে। তাই মনে হয়, যখন দেশের সকলেই ঘুমাইতেছিল, তখন ঐ একমাত্র পুরুষ নিজের অন্তর দীপটি জ্বালাইয়া জাগিয়া বসিয়াছিলেন, কারণ,―“যা নিশা সর্ব্বভূতানাং তস্যাং জাগর্ত্তি সংযমী। আমি তাঁহার সেই বাণীগুলির প্রতিও বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি, হয় ত’ এখনও তদ্দ্বারা মোহাচ্ছন্নের চৈতন্য-সম্পাদন হইতে পারে।
নেতাজীর নীতি ও নেতৃত্বের মূলে যে একটী বিশিষ্ট জাতি-ধর্ম্ম বা সাধনামূলক সংস্কৃতির প্রেরণা আছে, এই পুস্তকে আমি তাহাও বিশেষ করিয়া উল্লেখ করিয়াছি। বাঙালী পাঠককে সে বিষয়ে অবহিত হইতে হইবে, কারণ, ধর্ম্মের দিয়াও ঐ নীতির সহিত গান্ধী নীতির প্রত্যক্ষ বিরোধ আছে। গান্ধীজীর ধর্ম্ম আধুনিক ভারতের ধর্ম্ম হইবার উপযোগী কি না, তাহা মধ্যযুগীয় আধ্যাত্মিকতারই অধিকতর অনুকূল কি না―আত্মনিগ্রহ এবং ব্রত-উপবাস-ভজন প্রভৃতির বৈরাগ্যমূলক সেই সন্ন্যাসের আদর্শ আধুনিক জীবনের আদর্শ হইতে পারে কিনা, ইহাও চিন্তা করিয়া দেখা আবশ্যক। বাঙলীই ধর্ম্মের ঐরূপ আদর্শ-বিষয়ে, ভারতের অন্য সকল জাতি হইতে চিরদিনই কিছু স্বতন্ত্র, সেই আধ্যাত্মিক আদর্শকেও আধিভৌতিকের সহিত মিলাইয়া, একটা পূর্ণতর জীবন-বাদকে ধরিয়া থাকাই তাঁহার প্রতিভার বিশিষ্ট লক্ষণ। ‘বাংলার নবযুগ’ নামক গ্রন্থে আমি ইহার বিস্তারিত বিচারণা করিয়াছি, এখানে এই প্রসঙ্গে পুনরায় দুই-চারটি কথা বলিব। বাঙালীই পুনরায় সেই আধ্যাত্মিকতাকে, নবযুগের প্রয়োজনে, একটি নূতন রূপে, মানুষের দেহমনের বাস্তব ভিত্তির উপরে স্থাপিত করিয়াছে। এই ধর্ম্মের নাম―দেশ ও জাতি-প্রেম, ইহার সাধনায় শক্তিই মুখ্য। ইহা যেমন নিখিল মানব-প্রেম নয়, তেমনই তাহার বিরোধীও নয়; ইহা অহিংসা বা