ভূমিকা
সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যিকসঙ্ঘ “রবিবাসর”-এর দুইটী অধিবেশনে “জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ” নামে আমি বক্তৃতা করিয়াছিলাম। বক্তৃতাগুলি সংশোধিত ও পরিবর্ধিত আকারে “দেশ” পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এখন বন্ধুদের অনুরোধে ঐগুলি পুস্তকাকারে প্রকাশ করিলাম।
রবীন্দ্রনাথ বিরাট ব্যক্তিত্বশালী পুরুষ ছিলেন। তাঁহার প্রতিভা সর্বতোমুখী ছিল বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। নানা দিক দিয়া বাঙলা সাহিত্যে তাঁহার দান অতুলনীয়। বিশ্বসাহিত্যে তাঁহার আসন সুপ্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে বাঙলার তথা ভারতের জাতীয় জীবনের উপরেও তাঁহার প্রভাব অসামান্য। দুঃখের বিষয়, রবীন্দ্রনাথের আধুনিক সাহিত্যশিষ্য ও ভক্তেরা রবীন্দ্রনাথের জীবনের এই “রাজনৈতিক” দিকটা লইয়া তেমন আলোচনা করেন না, ইহার উপর গুরুত্ব আরোপ করিতে কুণ্ঠিত হন। তাঁহারা রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বপ্রেমিক ও বিশ্বমানবের পূজারী বলিয়া গর্ব অনুভব করেন, কিন্তু তিনি যে সর্বাগ্রে স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রেমিক এবং জাতীয়তাবাদী ছিলেন, একথা স্বীকার করিতে যেন লজ্জাবোধ করেন।
অথচ আমরা মনে করি, রবীন্দ্রনাথের জীবনের মূলমন্ত্র,—তাঁহার সমস্ত কবিত্বের উৎস ছিল এই স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রেম, বাল্যকাল হইতেই জাতীয়তাবাদের আদর্শ তাঁহার জীবন ও সাহিত্যের গতি নিয়ন্ত্রিত করিয়াছিল। এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের জীবনের সেই দিকটা লইয়াই আমি বিশেষভাবে আলোচনা করিয়াছি। তাঁহার অসাধারণ কবিপ্রতিভা বা তাঁহার সৃষ্ট অতুলনীয় সাহিত্যের মূল্য বিচার করিতে চেষ্টা করি নাই।