বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৶৹

সমাজকে পাইয়া বসিয়াছিল। এখন আবার “মার্ক্সবাদ” আমাদের আধুনিক শিক্ষিত সমাজের বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়াছে। তাঁহাদের নিকট উহাই জ্ঞানরাজ্যের শেষ কথা, সমাজ, সাহিত্য, ধর্ম, রাষ্ট্রনীতি—সব কিছুই এই একমাত্র কষ্টি পাথরে ঘষিয়াই তাঁহারা পরীক্ষা করিয়া থাকেন। যত কিছু সুন্দর বা মহৎ জিনিষই হউক না কেন, এই বিচারে না টিকিলে তাহার কোন মূল্যই তাঁহারা স্বীকার করেন না। “মার্ক্সবাদ” অতি উচ্চাঙ্গের তত্ত্ব সন্দেহ নাই। মানুষের জ্ঞানভাণ্ডারে মার্ক্সের অতুলনীয় দানের মূল্যও কেহ অস্বীকার করে না। কিন্তু দেশকালপাত্রনির্বিচারে উহাই মানবসভ্যতা তথা রাষ্ট্র ও সমাজের অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ বা তাহার মূল্য নির্ধারণ করিবার একমাত্র মাপকাঠি, ইহা আমরা স্বীকার করিতে পারি না। মার্ক্স মানবসভ্যতার অভিব্যক্তির মূলে অর্থনৈতিক কারণকেই প্রাধান্য দিয়াছেন, এমন কি অনেকস্থলে উহাকেই একমাত্র কারণ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। কিন্তু আধুনিক কালের বহু মনীষী একথা স্বীকার করেন না। তাঁহারা মানবসভ্যতা বা মানবসমাজের অভিব্যক্তির মূলে অন্যান্য প্রবল শক্তির ক্রিয়াও লক্ষ্য করিয়াছেন। প্রেম, সৌন্দর্য, দুর্জ্ঞেয় বিশ্বরহস্যের মূল অনুসন্ধানের দুর্নিবার প্রবৃত্তি, স্বাধীনতার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা—এই সমস্তই মানবসমাজের অভিব্যক্তির মূলে কার্য করিয়াছে, মানবসভ্যতার গতিপথ নিয়ন্ত্রিত করিয়াছে। এগুলিকে একমাত্র অর্থনৈতিক কারণের হামামদিস্তায় ফেলিয়া চূর্ণ করিয়া সর্বরোগহর মকরধ্বজ প্রস্তুত করিবার চেষ্টা নিশ্চয়ই সমর্থনযোগ্য নহে। ইউরোপে গ্রীক বা রোমক সভ্যতার অভিব্যক্তি, পঞ্চদশ শতাব্দীর রেনেসাঁস। ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, অন্যদিকে ভারতে আর্য্যসভ্যতা ও বৌদ্ধসভ্যতার বিকাশ, আরব সভ্যতার অভ্যুদয়, এ সকলের মূলে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়া কি আর কিছুই ছিল না?