পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৫৭

পাচ্চি, এই যে নীল আকাশ এবং নীল সমুদ্রের বিপুল অবকাশ― এ যেন অমৃতের পূর্ণ ঘট।

 অমৃত,—সে যে শুভ্র আলোর মত পরিপূর্ণ‌ এক। শুভ্র আলোয় বহুবর্ণচ্ছটা একে মিলেচে, অমৃতরসে তেমনি বহু রস একে নিবিড়। জগতে এই এক আলো যেমন নানাবর্ণে বিচিত্র, সংসারে তেমনি এই এক রসই নানা রসে বিভক্ত। এই জন্যে, অনেককে সত্য করে জান্‌তে হলে, সেই এককে সঙ্গে সঙ্গে জান্‌তে হয়। গাছ থেকে যে ডাল কাটা হয়েচে, সে ডালের ভার মানুষকে বইতে হয়, গাছে যে ডাল আছে সে ডাল মানুষের ভার বইতে পারে। এক থেকে বিচ্ছিন্ন যে অনেক, তারই ভার মানুষের পক্ষে বোঝা,―একের মধ্যে বিধৃত যে অনেক, সেই ত মানুষকে সম্পূর্ণ আশ্রয় দিতে পারে।

 সংসারে একদিকে আবশ্যকের ভিড়, অন্যদিকে অনাবশ্যকের। আবশ্যকের দায় আমাদের বহন কর্‌তেই হবে, তাতে আপত্তি করলে চল্‌বে না। যেমন ঘরে থাক্‌তে হলে দেয়াল না হলে চলে না,―এও তেমনি। কি সবটাই ত দেয়াল নয়। অন্তত খানিকটা করে জানালা থাকে—সেই ফাঁক দিয়ে আমরা আকাশের সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা কবি। কিন্তু সংসারে দেখ্‌তে পাই লোকে ঐ জানালাটুকু সইতে পারে না। ঐ ফাঁকটুকু ভরিয়ে দেবার জন্যে যতরকম সাংসারিক অনাবশ্যকের সৃষ্টি। ঐ জানলাটার উপর বাজে কাজ, বাজে চিঠি, বাজে সভা, বাজে বক্তৃতা, বাজে হাঁস্‌ফাঁস্‌ মেরে দিয়ে, দশে মিলে ঐ ফাঁকটাকে