পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
জাপান-যাত্রী

একেবারে বুজিয়ে ফেলা হয়। নারকেলের ছিব্‌ড়ের মত, এই অনাবশ্যকের পরিমাণটাই বেশী। ঘরে, বাইরে, ধর্ম্মে, কর্ম্মে, আমােদে, আহ্লাদে, সকল বিষয়েই এরই অধিকার সব চেয়ে বড়— এর কাজই হচ্চে ফাঁক বুজিয়ে বেড়ানো।

 কিন্তু কথা ছিল ফাঁক বোজাব না, কেননা ফাঁকের ভিতর দিয়ে ছাড়া পূর্ণকে পাওয়া যায় না। ফাঁকের ভিতর দিয়েই আলো আসে, হাওয়া আসে। কিন্তু আলো হাওয়া আকাশ যে মানুষের তৈরি জিনিষ নয়, তাই লােকালয় পারৎপক্ষে তাদের জন্যে জায়গা রাখতে চায় না—তাই আবশ্যক বাদে যেটুকু নিরালা থাকে, সেটুকু অনাবশ্যক দিয়ে ঠেসে ভর্ত্তি করে দেয়। এম্‌নি করে মানুষ আপনার দিনগুলোকে ত নিরেট করে তুলেইচে, রাত্রিটাকেও যতখানি পারে ভরাট করে দেয়। ঠিক যেন কলকাতার ম্যুনিসিপালিটির আইন। যেখানে যত পুকুর আছে বুজিয়ে ফেল্‌তে হবে,—রাবিশ দিয়ে হোক্, যেমন করে হােক্। এমন কি, গঙ্গাকেও যতখানি পারা যায় পুল-চাপা, জেটি-চাপা, জাহাজ-চাপা দিয়ে গলা টিপে মারবার চেষ্টা। ছেলেবেলাকার কল্‌কাতা মনে পড়ে, ঐ পুকুরগুলােই ছিল আকাশের স্যাঙাৎ, সহরের মধ্যে ঐখানটাতে দ্যুলােক এই ভূলােকে একটুখানি পা ফেলবার জায়গা পেত, ঐখানেই আকাশের আলােকের আতিথ্য কর্‌বার জন্য পৃথিবী আপন জলের আসনগুলি পেতে রেখেছিল।

 আবশ্যকের একটা সুবিধা এই যে, তার একটা সীমা আছে। সে সম্পূর্ণ বেতালা হতে পারে না, সে দশটা-চারটেকে স্বীকার