পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল আকাশে খই ক্ষেতের সোনালি ফুলের মতো অজস্র তারা, শিরীষ বনের সবুজ রোমশ নীড়ে সোনার ডিমের মতো ফালগনের চাঁদ । হয়তো গুলির শব্দ ঃ আমাদের তিয়েক গতিস্রোত, আমাদের পাখায় পিসটনের উল্লাস, আমাদের কণ্ঠে উত্তর হাওয়ার গান ! হয়তো গলির শব্দ আবার ঃ আমাদের স্তবধতা, আমাদের শান্তি । আজকের জীবনের এই টুকরো টুকরো মত্যু আর থাকত না ; ধাকতো না আজকের জীবনের টুকরো টুকরো সাধের ব্যথতা ও অন্ধকার ; আমি যদি বনহংস হতাম, বনহংসী হতে যদি তুমি ; কোনো এক দিগন্তের জলসিড়ি নদীর ধারে ধানক্ষেতের কাছে । ঘাস কচি লেব পাতার মতো নরম সবুজ আলোয় পৃথিবী ভীরে গিয়েছে এই ভোরের বেলা ; কাঁচা বাতাবির মতো সবুজ ঘাস—তেমনি সম্ৰাণ— হরিণেরা দাঁত দিয়ে ছিড়ে নিচ্ছে । আমারো ইচ্ছে করে এই ঘাসের এই ঘ্ৰাণ হরিং মদের মতো গেলাসে গেলাসে পান করি, এই ঘাসের শরীর ছানি—চোখে চোখ ঘষি, ঘাসের পাখনায় আমার পলক, ঘাসের ভিতর ঘাস হয়ে জন্মাই কোনো এক নিবিড় ঘাস-মাতার শরীরের সঙ্গেবাদ অন্ধকার থেকে নেমে । হায় চিল হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দাপরে তুমি আর কে'দো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে ! তোমার কান্নার সরে বেতের ফলের মতো তার মান চোখ মনে আসে ! পথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রপে নিয়ে দরে ; আবার তাহারে কেন ডেকে আন ? কে হায় হৃদয় খ:ড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে [ হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দপুরে তুমি আর উড়ে-উড়ে কোঁদো নাকো ধানসিড়ি নদীটির পাশে । S9