পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বললেন—‘কলকাতায় যাবার টাকাটা জোগাড় করেছি। কবে যাবে? —'একদিন গেলেই হয়। _: —যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততই ভালো।’ —‘এই সাত বছর ধরে কত বারই তো এলাম-গেলাম, বাবা।’ —“কিন্তু এবার তো গত সাত বছরের মতো হবে না।’ —হবে না? একটু হেসে, কী করে তুমি জানলে বাবা ? একটু বিদ্রুপ করে হেসে বললাম, কী যেন বলছিলাম...’ বাবাকে আহত হতে দেখে জানলার ভিতর দিয়ে তাকিয়ে চুপ করে রইলাম। —“তোমার মেজকাকার সঙ্গে কথা হয়েছিল ?’ —‘হ্যা’ —“চাকরি-বাকরির কথা?” —‘হ্যা হয়েছিল।’ —‘কী বললেন ?? —বললেন, তুমি আর তোমার বাবা ইহকালটা নমো-নমো করে কাটিয়ে দাও, পরকালে হয়তো কপাল খুলে যাবে। দু-এক মুহুর্ত বাবা শ্ৰীহীন, জীর্ণ ক্ষীণমুখে বসে রইলেন। త్యా হো-হো করে হেসে—ও, তা এই বুঝি বললে সুরেশ ? —মন্দ বলে নি। কিন্তু পরলোকে আমি তো বিশ্বাস করি।” —“আমি তো কিছুতেই করে উঠতে পারলাম না।’ —‘পারলে না ?” —মৃত্যুর পর কী আর থাকে? —‘থাকে বইকি; সমস্তই থাকে; আরো গভীর অধ্যাত্মভাবে থাকে, উপনিষদের— —উপনিষদ যারা তৈরি করেছেন তারা পরলোক থেকে ফিরে এসে রচনা করেন নি তো; রক্তমাংসের শরীরে ইহলোকে বসে যে-ধারণা তাদের ভালো লেগেছে তাই ব্যক্ত করে গেছেন; তাদের বিশ্বাসে আশ্বস্ত হবার কোনো কারণ দেখি না।’ —'একদিন হয়তো দেখবে।’ —আশীর্বাদ করো, দেখতে পারি যেন। —"নিজের মনের আন্তরিক অনুসন্ধানে যা সত্য বোধহয় সেই টেকে। বিশ্বাস করো, এই আশীর্বাদ করি। —“তা হলে হয়তো চিরজীবন অবিশ্বাসী হয়েই থাকব।’ —“থেকো।’ —ভাবতে গেলে তোমার দুঃখ করে না বাবা ? —‘কী দুঃখ ? একে-একে যে দুই হয় এ-কথা যদি আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না, আমার বুদ্ধি-বিচার কল্পনা সমস্তই যদি সাব্যস্ত করে যে তিন হয়—তা হলে এই অন্ধতার অভিশাপ বুকে নিয়েই জীবনের পথে চলতে হবে; এ অভিশাপ মোচন করবার শক্তি আমার নেই। কোনো মানুষের নেই—বিধাতা যদি দয়া করে ৪২