পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এঁরা ছাড়া লোকেন ত আসতই যখনি ছুটি পেত। চৌধুরী ছোট ভাইদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল না আগে, এখানে হল। আশুবাবু কিন্তু তার পরম বন্ধু বিলেত থেকেই। এঁদের সকলের আসা-যাওয়ার সমসাময়িক আমার লেখার হাত খুলে যাওয়া।

 অন্যত্র একবার বলেছি-‘বালকে' প্রকাশিত আমার প্রথম প্রথম রচনা উদ্যমের পর ভারতীতে ‘প্রেমিক-সভা’ বলে অস্বাক্ষরিত হাস্যরসান্বিত একটি লেখা লিখে Byron-এর মত আমি একদিন হঠাৎ জেগে উঠে দেখলুম বড় লেখক হয়ে গেছি, চারদিক থেকে প্রশংসা বর্ষণ হতে থাকল, এবং আর সবাইকে ছিপিয়ে রেখে রবিমামা অপ্রত্যাশিতভাবে অভিনন্দন করে লিখলেন—“নাম দিসনি বলে তোর এ লেখার ঠিক যাচাই হল। নতুন হাতের লেখার মত নয়, এ যেন পাকা প্রতিষ্ঠ লেখকের লেখা। এ যদি আমারই লেখা লোকে ভাবত, আমি লজ্জিত হতুম না।” এত বড় সমাদরে আমি আহ্লাদে লজ্জায় মৌন হয়ে গেলাম। কিন্তু এ-লেখা লিখে একটু, বিপদেও পড়লম। কেউ কেউ নিজের মাথায় টুপি খাপ খেয়ে বসছে সন্দেহ করে মাথা চুলকাতে লাগল, কেউ বা কথঞ্চিৎ মাথা-গরম হয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকাতে লাগল। কিন্তু এ চায়ের পেয়ালার ঝড় শীঘ্রই শান্ত হয়ে গেল। 'চিরকুমার সভা'র মত প্রেমিক-সভা ভেঙ্গে গেল না, সম্মানই কার্যকরী রইল।

 কলম আমার খুলে গেল। এর পর সংস্কৃত কাব্যের আলোচনামূলক লেখা বেরতে থাকল। প্রথমেই কুমারসম্ভবের ‘রতি-বিলাপ'। হীরেন দত্ত পরম্পরায় বলে পাঠালেন—“ভারি একটা নতুনত্ব আছে এ-লেখায়।” তাঁর মৃত্যুর দু-তিন বৎসর পূর্বে ও যখন ‘নীলের উপোস' শোনাচ্ছিলুম তাঁকে- তার প্রতিপাদ্য বিষয় ও ভাষার তারিফ করতে করতে বললেন—“আপনার সব লেখা বই আকারে ছাপান না কেন? বাঙলার সাহিত্য-জগৎকে বঞ্চিত করে রাখছেন। আপনার ‘রতি-বিলাপ' একটা sensation এনেছিল-সেসব ত আজ পর্যন্ত বই করে গেঁথে রাখলেন না। এখনো ছাপিয়ে ফেলুন।”

 তার পরে 'মালবিকা-অগ্নিমিত্র'। বঙ্কিমবাবুকে এইটি পড়তে পাঠিয়েছিলুম আগে লিখেছি। তাঁর এ বিষয়ে যে দুর্মূল্য চিঠি পেলুম, সে চিঠি গেছে পঞ্জাবের পলিটিক্যাল অগ্নিতে ভস্মীভূত হয়ে-সে কথাও পূর্বে বলেছি। 'মালবিকা-অগ্নিমিত্র’ সম্বন্ধে রবিমামার চিঠিও সঙ্গে সঙ্গে গেছে। শুধু এই বিষয়ের চিঠি নয় তাঁর ছেলেবেলা থেকে তাঁর যত

১০১