পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বামীকে ফেরানর জন্যে ছট্‌ফট্‌ করে অবশেষে ডাক্তারী তল্পিতল্পাসমেত তাঁকে ফিরিয়ে এনে কলকাতায় স্বগৃহে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তা কতকটা বুঝতে পারলুম।

 আর একটা প্রবল ধাক্কা এল। আমার বাড়ির সামনেই রাস্তার ওপারে একজন কণ্ট্রাক্টর একখানা বড় বাড়ি তুলছে—একটা ছোট বাড়ি হয়ে গেছে, তাতে কিছু কিছু লোকজন থাকে। কণ্ট্রাক্টরের একমাত্র ছেলে দূর্বৃত্ত, বাপের পয়সা দুহাতে ওড়ায়। বাপ-মা তাকে শাসনে আনতে পারে না—তারা থাকে শহরের ভিতর ছেলের বৌকে নিয়ে, ছেলে কখন কোথায় থাকে, কোথায় যায় আসে খোঁজ পায় না। একদিন গভীর রাত্রে আমি ঘুমিয়ে আছি—আমার পরিচারিকা—মাদ্রাজী আয়া আমার ঘরে না শুয়ে সিঁড়ির উপরেই ল্যাণ্ডিংয়ে শুয়েছে সেখানে বেশী হওয়া যাবে বলে। হঠাৎ ভয়ানক চীৎকার স্বরে কাঁউ মাউ করে উঠল—তাকে মাড়িয়ে কে পাশের ঘরে ঢুকেছে—যেটা ড্রেসিংরুম। তার চেঁচামেচিতে আমি জেগে উঠে তাড়াতাড়ি তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলুম—কি হয়েছে? সে বললে পাশের ঘরে লোক ঢুকেছে। ফুটপাতের ওধারে পুলিসের একটা আউটপোস্ট ছিল—কণ্ট্রাক্টরের বাড়িরই পাশে। আমি বারান্দায় গিয়ে ‘পাহারাওয়ালা’ বলে ডাক দিতে দুজন বাড়ির নীচে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলে কি হয়েছে? আয়া যা বলেছিল, আমি তাই বললুম। ঠিক সেই সময় ঘর থেকে নীচে লাফাতে গিয়ে পা-ভাঙ্গা লোকটাকে দেখতে পেয়ে তারা ধরে ফেললে। আমার বাড়িতে স্টেট থেকে দেওয়া দুজন সেপাই বা পিয়ন রাত্রে শুত। কলকাতা থেকে আমার সঙ্গে আসা বিপিন বলে একজন পুরানো বাঙালী চাকরও নীচে শুত। তারা এতক্ষণ নিদ্রামগ্ন ছিল, পুলিশের গোলমালে তিনজন সবে জেগেছে। একজন সেপাইকে নরসিং আয়েঙ্গারের বাড়ি ও একজনকে মিস্টার ভাভার বাড়ি খবর দিয়ে পাঠালুম। তাঁরা দুজনেই এলেন সেই রাত্রে, মিস্টার ভাভার সঙ্গে তাঁর কন্যা মেহেরবাঈও এল। এঁরা আমাকে তাঁদের বাড়ি নিয়ে গেলেন তখনি—বাকী রাতটা সেখানেই কাটল। কণ্ট্রাক্টরের ছেলেটার নামে পুলিস কেস হল, তার জেল হল ছমাসের। ব্যাপারটা ঐখানেই শেষ হল, কিন্তু মনে এর রেশের একটা বড় রকম ঢেউ অনেকদিন ধরে খেলতে লাগল। নিউজ-এজেন্সীর মারফৎ খবরটা কলকাতার সংবাদপত্র মহলেও পৌঁছেছিল। ‘বঙ্গবাসী’তে একটা লম্বা মন্তব্য বেরল—মর্ম তার—“এ ঘরের মেয়ের একলা একলা বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার

১২৩