পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভিতর তাঁর কাজ চলতে থাকল। আমারও ভিতর বিবেকানন্দের কাজ চলতে থাকল। যেমন একটা ছোট্ট অশ্বত্থ বীচি দেওয়ালের একটা ফাটলে উড়ে পড়ে ক্রমে ক্রমে সে ফাটলকে ঠেলে ঠেলে বাড়িয়ে বাড়িয়ে একদিন ডালপালা বের করে গাছ হয়ে দেখা দেয়, তেমনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পথে চলার আকাঙ্ক্ষা আমার জীবনে অলক্ষ্যে সুড়ঙ্গ কাটতে থাকল। প্রথমে বিবেকানন্দের সঙ্গে পত্র-ব্যবহারে তাঁর একখানি পত্রে পাতঞ্জল যোগসূত্রের একটি বচনের উল্লেখে বইখানি আদ্যোপান্ত পড়ার উৎসাহ উদ্দীপ্ত হল। বাঙলা তর্জমাসমেত সূত্রগুলি একদিন হুহু করে পড়ে ফেল্লুম। রাজযোগশাস্ত্রের সঙ্গে একটা সাধারণ পরিচয় হল। তারপরে হঠযোগসমন্বিত রাজযোগের অনেকানেক পুস্তক অনুধাবন করেছি এবং যোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আলাপও হয়েছে। স্বামীজীর কর্মযোগ পুস্তিকা উপহার পেয়ে ভগবদ্গীতার প্রতি প্রথম দুটি আকৃষ্ট হল—তার আগে এর একটি শ্লোকও পড়িনি—আমাদের পরিবারে শ্রীকৃষ্ণের গরিমা ছিল না। এই রকম করে করে নিজে নিজে অবগত হতে থাকলুম আমার শিক্ষার ভিৎটায় ভারতীয় আধ্যাত্মিক উপকরণ কিছুটা থাকলেও অনেকটার অভাব রয়ে গেছে। ভারতীয় কৃষ্টি যে হীরকখানি তার সব দিকের আলো ও ছায়া আমার বুদ্ধিতে হৃদয়ে ও আত্মায় সম্পতিত হয়নি। সেই হিসেবে আমার ‘education perfect’ হওয়া থেকে এখনো বহুদূরে। এই অভাব পূরণের একটা স্বতঃপ্রবণতা এল আমার। হিন্দুর হিন্দুত্ব জিনিসটি যে কি তা ভাল করে জানবার একটি প্রবৃত্তি জাগল। তার এক সীমায় ঔপনিষদিক বেদান্তের ব্রহ্মের উপাসনা, আর এক সীমায় পৌরাণিক প্রতিমার ধ্যানধারণা ও পুজার বিধান। আমাদের পূর্ব পুরুষ ঋষিদের মনীষায় এই দুই বিপরীতের স্থাপনা কেমন করে স্থান পেয়েছিল তাই জানতে আগ্রহ হল। যখন তাঁরা দুইকেই আসন দিয়েছেন তখন ফেলবার জিনিস নয় কোনটি—তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা আমায় এতে স্থিতধী করলে। ষড়দর্শনগুলি মোটামুটি অধ্যয়নের পর এক একখানি পুরাণ খুলতে খুলতে দৃঢ় অনুভূতি হল পুরাণগুলি parables, গল্পচ্ছলে গভীরতত্ত্ব—সেই বৈদান্তিক ব্রহ্মতত্ত্বই—তাদের ভিতর নিহিত। কোরাণ ও বাইবেলের দ্বারা প্রভাবিত রামমোহন রায় সাকার পুজার বিরোধী হয়ে কেবলমাত্র নিরাকার ব্রহ্মোপাসনার প্রচার করেন। খ্রীস্টীয় চিন্তাধারার টীকা নেওয়া ভারতবর্ষ সম্পূর্ণরূপে আকারবর্জিত নিরাকার ঈশ্বরের প্রণিধানের পক্ষপাতী হল। কিন্তু পারলে কৈ? ঈশ্বরের চরণকল্পনা

১৬৫