পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনুরোধ আছে।” আমি লজ্জিত হয়ে বললুম—“সে কি? কিসের অনুরোধ?”

 তিনি বললেন—“সুহৃদ সমিতির ছেলেরা ‘আনন্দমঠ’ অভিনয় করতে যাচ্ছে, আপনি সেটি বন্ধ করে দিন।”

 ‘সুহৃদ সমিতির ছেলেরা ত আপনাদেরই শহরের ছেলে, আপনাদেরই কর্তৃত্ব তাদের উপর। আমি ত একদিনের অতিথি অভ্যাগত। আমার কথার চেয়ে আপনাদের কথারই ত বেশী জোর হবে তাদের উপর। আপনারাই বলুন না, আপনারাই তাদের আদেশ করুন না অভিনয় বন্ধ করতে।”

 হেমন্ত বসু নামক ব্যারিস্টার—ডাক্তার ধর্মদাস বসুর পুত্র ও রজনী রায়ের জামাতা—উষ্ম হয়ে বলে উঠলেন—“ওসব চালাকির কথা রেখে দিন। আপনি বেশ জানেন, তারা আমাদের কথা শুনবে না, আপনার ইঙ্গিতেই চলবে।”

 “তাই যদি সতাই হয়, তাহলে তাদের বারণ করবার আগে আমি নিজে বুঝে নিই বারণ করার কারণটি কি?”

 ‘‘বারণ করার কারণ মুসলমানদের আপত্তি। ঐ বইখানার অভিনয় হলে মুসলমানরা আমাদের ত্যাগ করবে, কনফারেন্সে ঢুকবে না, সুরেনবাবু, অনেক সাধ্য সাধনা করে রেলভাড়া দিয়ে তাদের এনেছেন। তাঁর সব পরিশ্রম পণ্ড হবে।”

 “বইখানা যদি নির্দোষ করে অভিনয় করা হয়, তবুও?”

 হাঁ, তবুও।”

 “এটা কি ঠিক? তাদের কনফারেন্সে যোগ দেওয়ানর জন্যে তাদের প্রত্যেক অন্যায় আবদারটাও মেনে চলতে হবে কি? তাহলে আবদারের আর শেষ থাকবে কি কোনদিন? তার চেয়ে তাদেরই অনুরোধ করুন না রিহার্সাল দেখুন, যেখানে যেখানে বর্জনীয় মনে করেন—বলুন, ছেলেরা নিশ্চয় তাতে আপত্তি করবে না।”

 হেমন্তবাবু, গর্জে উঠলেন—“তা হবে না। ও অভিনয়টাই সুহৃদ সমিতির প্রোগ্রাম থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দিতে হবে।”

 “ছেলেরা যদি রাজী না হয় তাতে?”

 “তাহলে রক্তের স্রোত বইবে—খুনোখুনি হবে।”

 “তাই যদি হয়, এই ডরাও যদি দেয় আপনাদের মুসলমান বন্ধুরা, আমি সুহৃদ সমিতির ছেলেদের বলব—“ডোরো না, অন্যায়ের পায়ে মাথা নত কোরো না, বহুক রক্ত—লড়, মরতে হয় মর।”

১৭৩