পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আয়োজন করলুম। আমার পূর্বোক্ত বন্ধু ডেপুটি একাউণ্ট্যাণ্ট-জেনারেল মিস্টার হায়দরী ছুটীতে বম্বে যাচ্ছিলেন, আমি তাঁর সঙ্গে বম্বে বেড়াতে যার বললুম তাঁকে। তাঁকে জানালুম পথে পুণায় নামব আমি দুইএকদিনের জন্যে, সেখানে দু-একটি বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বম্বেতে আসব।

 পুণা এলফিনস্টোন কলেজের ভূতপূর্ব প্রফেসর আধ-পাগলা বৃদ্ধ গোবিন্দ কড়কড়ে আমাদের বহু পুরাতন পারিবারিক বন্ধু। তাঁকে টেলিগ্রাম করে দিলুম আমি আসছি। তিনি স্টেশনে আমায় নিতে এলেন। তিনি থাকেন খড়কি ছাউনিতে। খড়কি যেতে পথে মুলা ও মঠা দুই নদীর সঙ্গম দেখা যায়। এই সঙ্গমের একটি বাংলোতে যখন মেজমামা থাকতেন প্রায় পঁচিশ বৎসর পূর্বে, তখন আমার দাদা জ্যোৎস্নানাথের জন্ম হয় সেখানে, সুরেনের জন্মও তার এক বছর পরে এই সঙ্গমের ধারে। তাই দাদা ও সুরেন দুজনকেই “পুণা-ব্রাহ্মণ” বলি আমরা।

 গোবিন্দ কড়কড়ের বাড়িতে পৌঁছে স্নানাহার সমাপন করে তাঁকে বললুম—“মারহাট্টা পত্রের সম্পাদক এন সি কেলকার আমার বন্ধু। তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করতে যাব।” অপরাহ্নে গোবিন্দের ফিটন গাড়িতে কেলকারের বাড়ি পৌঁছলুম। তাঁকে বললুম—“তিলকের সঙ্গে আমার দেখা হওয়া একান্ত দরকার। তার বন্দোবস্ত করুন। তাঁর বাড়ি আমি যাব না, আপনার বাড়িতে তাঁকে ও আমাকে দুজনকেই আগামীকাল খেতে নিমন্ত্রণ করুন।” তিনি তাই করলেন। তখন তিলকের নামে তায়ি মহারাজ সংক্রান্ত ফৌজদারী মকদ্দমা চলছে। তাঁর বাড়ির মধ্যে, আশেপাশে—ডিটেকটিভ গিজগিজ করছে, তাঁর সঙ্গে সেখানে কথাবার্তা কওয়া একেবারে নিরাপদ নয়। তিলকের সঙ্গে যে দেখা করতে আসে, তারই উপর পুলিসের নজর পড়ে ও তার গতিবিধি বাধাসঙ্কুল হয়।

 পরদিন কেলকারের বাড়ি মধ্যাহ্ন ভোজনে তিলক মহারাজের সঙ্গে দেখা। তাঁর সে সময় এক মুহূর্তের অবসর নেই। নিজের ডিফেন্স নিজে প্রস্তুত করছেন। কেলকারের বাড়িতেও রাশীকৃত আইনের বই ও অন্যান্য কাগজপত্র সঙ্গে করে এনেছেন। আমার সঙ্গে তাঁর আগে কখনও দেখাসাক্ষাৎ হয়নি, এই প্রথম দেখা। চেহারায় একটা বলশালিত্বের ও একটা অটল দৃঢ়তার ছাপ। গোখলের চেহারায় যে কোমলতা ছিল, তা নেই। যেন একটি সজীব দৃঢ় বলস্তম্ভ বসে আছেন আইনের বই ও নথিপত্র

১৮০