পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 লোকেন পালিত: (? ১৮৬৫-?)। সার্, তারকনাথ পালিতের পুত্র। সাহিত্য-রসিক, রবীন্দ্রনাথের বিশেষ বন্ধু। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ১৮৮৬ সনে কর্মে লিপ্ত হন। ১৯১২ সনে পদত্যাগ করেন, মনে হইতেছে। ইহার পর তিনি কিছুকাল ব্যারিস্টারি করিয়াছিলেন। রবীন্দ্রনাথ 'জীবন-স্মৃতি'তে (বিশ্বভারতী সং. ৯৩৬৩, প. ৯৮) অন্যান্য কথার মধ্যে লিখিয়াছেন: “সাহিত্যে লোকেনের প্রবল আনন্দ আমার রচনার বেগকে পালের হাওয়ার মতো অগ্রসর করিয়াছে। আমার পূর্ণ যৌবনের দিনে ‘সাধনা'র সম্পাদক হইয়া অবিশ্রামগতিতে যখন গদ্যপদ্যর জুড়ি হাঁকাইয়া চলিয়াছি তখন লোকেনের অজস্র উৎসাহ আমার উদ্যমকে একটুও ক্লান্ত হইতে দেয় নাই। তখনকার কত পঞ্চভূতের ডায়রি এবং কত কবিতা মফঃস্বলে তাঁহারই বাংলাঘরে বসিয়া লেখা। আমাদের কাব্যালোচনা সঙ্গীতের সভা কতদিন সন্ধ্যাতারার আমলে সুরু হইয়া শুকতারার আমলে ভোরের হাওয়ার মধ্যে রাত্রের দীপশিখার সঙ্গে সঙ্গেই অবসান হইয়াছে।” লোকেন পালিতের বহু প্রবন্ধ ‘ভারতী'র পৃষ্ঠায় স্থান পাইয়াছে।


॥ চৌদ্দ॥

 মোহিনীবাবু: মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায় (১৮৫৮-১৯৩৬)। মোহিনীমোহন ১৮৭৯ সনে এম-এ, ১৮৮০ সনে বি-এল, এবং ১৮৮৩ সনে এটর্নীশিপ পরীক্ষা পাস করেন। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠা কন্যা সরোজা দেবীর সঙ্গে ১৮৭৬ সনে মোহিনীমোহনের বিবাহ হয়। ১৮৮৩ সনের মাঝামাঝি মোহিনীমোহন বিখ্যাত থিয়সফিস্ট মাদাম ব্লাভাট্স্কির সেক্রেটারী হইয়া ইউরোপ যাত্রা করেন। ইংলণ্ডে অবস্থান-কালে বহু ইংরেজ মনীষীর সঙ্গে তিনি পরিচিত হন। থিয়সফির সঙ্গে ক্রমে তাঁহার বিচ্ছেদ ঘটে। মোহিনীমোহন আমেরিকায় গমন করেন। ১৮৮৯ সনে দেশে ফিরিয়া তিনি এটর্নীর ব্যবসায়ে মন দেন। বহু সামাজিক এবং জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাহার যোগ ছিল। তিনি পরমহংস শিবনারায়ণ স্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ইংরেজী-বাংলা বহু পুস্তক ও প্রবন্ধ রচনা করিয়া গিয়াছেন। তাঁহার রচিত কয়েকখানি পুস্তক: ব্যাখ্যাসহ শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা, ইংরেজী অনুবাদ, Indian Spirituality, History as a Science, ভিক্ষার ঝুলি, জীবন-প্রবাহ (কবিতা), অবলা জীবনের আঁধার কোণ এবং প্রণবাদির ব্যাখ্য। ইহা ছাড়া পরমহংস শিবনারায়ণ স্বামীর ভ্রমণ-বৃত্তান্ত, উপদেশাবলীর সংগ্রহ, পরমকল্যাণ গীতা প্রভৃতি পুস্তকও উল্লেখযোগ্য।


 রমণীবাবু: রমণীমোহন চট্টোপাধ্যায় (১৮৬৫-১৯১৯)। মোহিনীমোহনের মধ্যম ভ্রাতা। তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজ হইতে এম-এ পাস করিয়া পুরাতন মেট্রো-পলিটন (বিদ্যাসাগর) কলেজে অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন। পরে জানকীনাথ ঘোষালের সহায়তায় কলিকাতা কর্পোরেশনের লাইসেন্স অফিসারের পদ লইয়াছিলেন। তিনি পরে ইহার ভাইস-চেয়ারম্যান হন। মধ্যে দুবৎসর তিনি ত্রিপুরারাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্য করেন। রমণীমোহন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠা কন্যা উষা দেবীর পাণিগ্রহণ করেন।


 যোগিনী ও রজনী: যথাক্রমে যোগিনীমোহন চট্টোপাধ্যায় (১৮৬৩-১৯৩২) এবং রজনীমোহন চট্টোপাধ্যায় (১৮৬৫-১৯৩৪)। রজনীমোহন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠা ভগিনী সুনয়নী দেবীকে বিবাহ করেন।

২২৬