পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিনরাত ধরে চরকির মত ঘুরছেন একবার নীচে একবার ওপরে। এর পিতা—আমাদের সেজ মেসোমশায়—যদুনাথ মুখোপাধ্যায়ের মত ইনি রঙ্গরসে ভরা। হাসিয়ে হাসিয়ে কথা কইতে, সভা জমকাতে ইনি অদ্বিতীয়। সুকুমার হালদারের সঙ্গে বিবাহের পর ডেপুটিগৃহিণী হয়ে মহকুমায় এর অন্দরে মেয়েদের একটি খাস এজলাস বসত। মজলিসের সদস্যাদের সঙ্গদোষে বা সঙ্গগুণে তথাকথিত অপৌত্তলিক ব্রাহ্মমন্ত্রদীক্ষিতা মেয়ে হয়েও তিনি সে দীক্ষার বন্ধন ছিন্ন করে পৌত্তলিক গুরুর কাছে মন্ত্রগ্রহণ করলেন, শিবপ্রতিমার পূজারত হলেন। বড় মাসিমার জ্যেষ্ঠা কন্যা ইর‌ুদিদিও কাশীতে শ্বশ‌ুরগহে নিত্য শিবদুর্গার সেবাপরায়ণা ছিলেন; কারণ, তাঁর বিবাহ হয়েছিল সেই রকম ঘরে—কাশীর নিরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের পর নিত্যরঞ্জন বাবার সঙ্গে—যাঁদের নিজ বাড়িতেই শিবমন্দির ছিল। ইরুদিদিকে তাঁরা ষোল-সতের বৎসর আর মায়ের কাছে মাতুলালয়ে পাঠাননি। অত বছর পরে ইরুদিদি যেদিন প্রথম আবার যোড়াসাঁকোয় পা ফেললেন, সেদিনটি সকলেরই একটি স্মরণীয় দিন—আমাদের ছোটদেরও। সুপ্রভাদিদির বিবাহ হয়েছিল ব্রাহ্মমতে ব্রাহ্মমতাবলম্বী রাখালদাস হালদারের পুত্র ব্রাহ্ম সুকুমার হালদারের সঙ্গে। তৎসত্ত্বেও সুপ্রভাদিদি নিজের স্বাধীন অভিরুচির অনুসরণ করলেন। কিন্তু যোড়াসাঁকোয় মাতুলালয়ে আনাগোনা সমান বজায় রাখলেন—এ বাড়ির সংস্কার ভঙ্গ করেছেন বলে তিলমাত্র অপ্রতিভ হলেন না।

 এহেন সুপ্রভাদিদি ছেলেবেলায় ছিলেন আমাদের নেত্রী। নিজের মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ-সমর তার প্রায়ই বাধত। তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন—“অতক্ষণ ধরে প্র্যাকটিস করতে যদি না ভাল লাগে, দরকার কি করবার?” “না করে উপায় ত নেই!” “আছে বৈকি। ঐ সময়ে ঘড়ির কাঁটাটা রোজ একবার করে এগিয়ে দিলেই হল।” আমি শুনে ভয় পেয়ে গেলুম। বল্লুম, “আমি পারব না।” তিনি বল্লেন—“কুছ পরোয়া নেই—আমি করে দেব।”

 একদিন আমার প্র্যাকটিসের সময় মা যখন গৃহান্তরে আছেন, সুপ্রভাদিদি একটা চেয়ারের উপর চড়ে ঘড়ির কাঁটা মিনিট কুড়ি এগিয়ে দিয়েই নিজে সরে পড়লেন।

 খানিক বাদে এ ঘরে এসে ঘড়ির দিকে চেয়ে মা যখন দেখলেন ঘণ্টা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তাঁর কেমন সন্দেহ হল। চৌকিতে চড়লেও আমার

১৮