পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সঙ্গী ছিল তাঁদের—ফ্রান্সের নিস্‌ শহর থেকে সংগৃহীত “নিসুয়া” নামের কুকুর,—ছোট ছোট সাদা লোমওয়ালা একটি তুলতুলে জাপানী lap-dog। সবাই তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করতুম, কোলে তুলতে চটকাতে ভালবাসতুম। প্রথমটা দাঁত খিঁচতে ত্রুটি করত না সে, কিন্তু পরে ঠাণ্ডা হয়ে থাকত।

 সুরেন বিবিদের পরিধান খাস বিলেতের কোট ও ফ্রক। এ বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েদের বাড়ির পরিধান তখনও সেই ইজের জামা, আর বাইরে স্কুলাদিতে যেতে হলে দিশী দর্জির হাতের যেমন-তেমন cut-এর ফ্রক। পেশোয়াজ প্রভৃতির চাল ইরুদিদি ইন্দুদিদিদের (বড়মাসিমার দুই কন্যা) পর থেকে উঠে গেছে। বলেছি আমাদের সান্ধ্য বিহার ছিল বাইরের তেতালার ছাদে। কিন্তু বিলেত ফেরৎ সুরেন বিবিরা রামার সঙ্গে রোজ ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে যেত। পালা করে এক একদিন বাড়ির এক একটি ছেলেমেয়ে তাদের সঙ্গে যেতে পেত। একদিন আমার পালা এল। দিদির ও আমার দুটি নতুন ফ্রক তৈরি হয়েছে। সুইস মস্‌লিনের উপর সুন্দর ফিতে দিয়ে সাজান। দিদি তাঁরটা মাঝে মাঝে পরে বাহার দেন, আমার অবসর আসে না। সেদিন ইডেন গার্ডেনে যাব বলে সেই ফ্রক পরে বাইরের বারান্দায় এসে অপেক্ষা করতে লাগলুম—রামার সঙ্গে সুরেন বিবিরা এলে একসঙ্গে নীচে নেমে গাড়িতে চড়ব বলে।

 আমি দাঁড়িয়ে আছি দক্ষিণ দিকে বৈঠকখানার সামনের বারান্দায়। আমাদের পড়ার ঘর হচ্ছে পশ্চিম দিকে। সে ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁর বারান্দায় এসে সতীশ পণ্ডিতমশায়ের চোখ হঠাৎ আমার উপর পড়ল। কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন—“কোথায় যাওয়া হচ্ছে এত সাজগোজ করে?”

 “সুরেন বিবির সঙ্গে ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে যাচ্ছি।”

 ‘‘কার হুকুমে?”

 ‘‘মা বলেছেন যেতে।”

 “বটে। আমায় জিজ্ঞেস করা হয় নি! আমার বিনা হকুমে যাওয়া হচ্ছে! যেতে পাবে না। ফিরে যাও মঙ্গলার কাছে। ফ্রক খুলে ফেল।”

 আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভিতরে ফিরে গেলুম নিজেদের ঘরে। মায়ের হুকুমের উপরেও যে পণ্ডিতমশায়ের হকুম চলতে পারে না এ সন্দেহ এল না মনে। বড় হয়ে একদিন মার কাছে এই দিনকার ঘটনাটা বর্ণনা করতে মা বললেন—“আমার কাছে এসে বললি নে কেন তখন?”

২৭