পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গালে একটি চড় মেরে আমায় কর্তব্যে সজাগ করলেন। বাড়িতে মঙ্গলা দাসীর মত স্কুলে এই খ্রীস্টান মহিলাটির চড়চাপড়ের বিশেষ খ্যাতি ছিল। একদিন একটি ছোট মেয়েকে এমন জোরে চড়িয়েছিলেন যে তাঁর পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ দুদিন ধরে তার গাল লাল করে বিরাজমান ছিল। কমিটির কাছে তার অভিভাবকের নালিশে এই শিক্ষয়িত্রী কর্মচ্যুত হলেন। ইস্কুলে আর কারো কাছে কোন শাস্তিই পাইনি। নীচে থেকে উপর পর্যন্ত সকলের কাছেই আদর-যত্ন পেয়েছি। তাই কি পড়াশুনায় বেশি মন না দিয়েও মন্দ হইনি, আর এই শিক্ষয়িত্রীর অকুশল ব্যবহারেই কি সেলাই আমায় পেয়ে বসেনি?

দু-চার ক্লাস উপরে উঠে নতুন একটি পড়ুয়া মেয়ের আবির্ভাবে পড়ায় নিবিষ্টচিত্ততা যে কি তার পরিচয় পেলুম। সে হচ্ছে হেমপ্রভা-জগদীশ বসুর একটি বোন। সে এসে অবধি সেই বরাবর ক্লাসে ফার্স্ট থাকে, তাকে ডিঙ্গোনর কথা কারো কল্পনায়ও আসে না। সে কিন্তু আমার প্রতি খুব আকৃষ্ট হল—আমাদের দুজনের গাঢ় বন্ধুত্ব হল। তখন মাঝে মাঝে তার অভিভাবিকা বড় বোন লাবণ্য-দিদির অনুমতি নিয়ে শনি রবিবারে সে বোর্ডিং থেকে আমাদের বাড়িতে এসে থাকত। তখন আমরা যোড়াসাঁকো ছেড়ে কাশিয়াবাগানে এসেছি। এই সময় দিদির বন্ধু দুর্গামোহন দাসের কনিষ্ঠা কন্যা, শৈল বা ‘খুসী’, শিবনাথ শাস্ত্রী মশায়ের কন্যা হেম এবং তার সঙ্গে সঙ্গে আমার সহপাঠী লাহোরের নবীন রায়ের কন্যা হেমন্ত—এরাও পালা করে আসত। আমাদের বন্ধু-জীবন খুব ভরাট হতে লাগল।

পাঁচ

আমরা যোড়াসাঁকো থেকে কাশিয়াবাগানে উঠে আসার আগে মেজমামীরা বিলেত থেকে ফিরেছেন। যোড়াসাঁকোয় আর এক নতুন আবহাওয়া এসেছে। মেজমামা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সব প্রথম ইণ্ডিয়ান সিভিলিয়ন—বম্বে প্রদেশে নিযুক্ত। মেজমামীর ছেলেমেয়ে সুরেন বিবির ইংরেজী ভাষণ ও ইংরেজী চালচলনের সঙ্গে সঙ্গে সাহেবী পোশাক-পরা বোম্বাইয়ের “রামা” চাকরের অভ্যুদয় সকলের পক্ষে ভারি আমোদজনক হল। ইন্দিরার “বিবি” নামটিও বোম্বায়ের আমদানী। আরও একটি

২৬