পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যুক্ত হয়েছি অনুভব করতে লাগলাম। লর্ড রিপনের বিরাট অভ্যর্থনায় স্টেশনে সারবন্দি “flower girls”দের মধ্যে আমায় একজন মনোনীত করা হল। অভ্যর্থনা কমিটির দেওয়া একই রকমের শাড়িজামা পরে, হাতে ফুলের সাজি নিয়ে প্রায় ত্রিশচল্লিশটি মেয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম ট্রেন আসার প্রতীক্ষায়। যেমন গাড়ি এসে থামল, লর্ড রিপন নামলেন, তাঁর উপর পুষ্পবৃষ্টি করলে ‘ফুলকুমারী’রা। আমার জীবনে ৯।১০ বছর বয়সে এই প্রথম পাবলিক অনুষ্ঠানে অবতারণা। এই অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ব্যারিস্টার গিরিজাশঙ্কর সেন। তাঁর ছোটবোন প্রমীলা আমার সহপাঠী বন্ধু। তাঁরই বড় বোন আজকালকার কংগ্রেসকর্মী মোহিনী দেবী।

 মেজমামীদের সঙ্গে রবিমামাও প্রথমবারের বিলেত যাত্রা থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। আমরা ছোটরা গানের ভিতর দিয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে এলুম। এ বিষয়ে পূর্বে লিখিত একটি প্রবন্ধ থেকে কিছু কিছু যোগবিয়োগের সঙ্গে উদ্ধার করছি—

 বাড়িতে গান-বাজনা ও অভিনয়াদির দিক থেকে রবিমামার প্রাধান্য ক্রমশ ফুটছে। এর আগে নতুনমামা—জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর সে দিককার কর্ণধার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বিলেতনিবাস কালেই আমার মায়ের রচিত ‘বসন্তোৎসব’ গীতিনাট্যের অভিনয় জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অধ্যক্ষতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সঙ্গীতের এক মহাহিল্লোলে হিল্লোলিত হয়ে উঠেছিল বাড়ি তখন। আমাদের শিশুকণ্ঠেও প্রতিধ্বনিত হতে থাকত বড় বড় ভাবের বড় বড় কথায় বড় বড় রাগ-“চন্দ্রশূন্য তারাশূন্য মেঘান্ধ নিশীথে য়ে য়ে য়ে য়ে”—বাগেশ্রীর তানে আমাদের গলা ও মন খেলিয়ে খেলিয়ে উঠত। “বসন্তোৎসব” বাস্তবিকই একখানি অপূর্ব জিনিস। রবিমামার মত য়ুরোপের দেশবিদেশ ঘুরে বহুদর্শিতায় পুষ্ট প্রতিভার ফল এটি নয়। শুধু ঘরের ভিতরে অন্তঃপুরে বসে বসে অন্তঃপুরিকার রচনা। ভারতবর্ষের পূর্বাপর কেবলমাত্র কল্পনা-রাজ্যবাসী কবিদেরই শ্রেষ্ঠতম কাব্যরচনার সঙ্গে তুলনীয়। বন্ধুদের যে আনুকূল্য রবীন্দ্রনাথের কৈশোর থেকে দোসর হয়েছিল, সেই আনুকূল্যের অভাবে এটা দেশে ছড়িয়ে পড়েনি। তবু আগরতলায় ত্রিপুরার রাজপ্রাসাদে যখন বহু বৎসর পরে নিমন্ত্রিত হয়ে যাই, রাজা বীরেন্দ্র মাণিক্যের নিজের অধিনায়কতায় তাঁর কন্যা, ভগ্নী ও অন্যান্য রাজ-অন্তঃপুরিকাদের দ্বারা এই গীতিনাট্যটির অভিনয় দেখে শুনে আশ্চর্য হয়েছিলুম।

২৯