পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রবীন্দ্রনাথের জন্যে বাড়িতে ভূমি তৈরি। তিনি এসে তাতে নতুন নতুন বীজক্ষেপ করতে থাকলেন। তিনি আসার পর প্রথম যে একটি ছোট্ট গীতিনাট্যের অভিনয় হল—যাতে ইন্দ্র ও শচী সাজেন নতুনমামা নতুনমামী এবং বসন্ত সাজেন রবিমামা, তার নাম “মানময়ী”, নতুনমামাই। তার রচয়িতা।

 তারপর হল সরস্বতী পূজার দিন ‘সারস্বত সম্মিলনে’ ছাদের উপর স্টেজ বেঁধে, বাইরের লোক নিমন্ত্রণ করে মহা ধুমধামে “বাল্মীকি প্রতিভা”। এইতে রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা প্রথমে সর্বজনসমক্ষে উদ্বোষিত হল।

 এসব মধুচক্রের রচয়িতা বড়রা হলেও আমরা ছোটরা নিত্য তাঁদের প্রসাদ-মধুপায়ী ছিলুম। কখনো কখনো তাঁদের অনুকরণে নিজেদের দল বেঁধেই আবার ঐ সবের অভিনয়পরায়ণ হতুম। আমাদের নেতা ছিলেন সুধীদাদা—বড়মামা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র। তিনি রবিমামার অনুকরণ করে ঠিক ঠিক সেই রকম বাল্মীকি সাজতেন, নিজের হাতের লেখাটিও তাঁর লেখার প্রায় অবিকল প্রতিরূপ করে তুলেছিলেন—তখনো তিনি সে প্রখ্যাত রবীন্দ্রনাথ হননি—যাঁর হস্তলিপির অনুলিপি দেশের ডজন দুজন ভক্ত ছেলেরা করেছে।

 এই রকমে পরোক্ষভাবে সঙ্গীত-প্রাণকতায় আমরা রবিমামার অধিনায়কত্বে আসতে থাকলুম। কিন্তু যেখানে তাঁর সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ হল সে ১১ই মাঘের গানে। এর আগে ১১ই মাঘের গানের অভ্যাস বড়মামা, নতুনমামা বা বোম্বাইপ্রবাস প্রত্যাগত মেজমামা—সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহ-নেতৃত্বাধীনে থাকত। রবিমামা বিলেত থেকে ফেরার পর তিনিই নেতা হলেন। দাদাদের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও নতুন নতুন ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করা, ওস্তাদদের কাছ থেকে সুর নিয়ে সুরভাঙ্গা, নিজের মৌলিক ধারার সুর তখন থেকেই তৈরি করা ও শেখান—এ সবের কর্তা হলেন রবিমামা। বাড়ির সব গাইয়ে ছেলেমেয়েদের ডাকও এই সময় থেকে পড়ল। আগে শুধু অক্ষয়বাবুপ্রমুখ ওস্তাদের দল ১১ই মাঘের গায়ক ছিলেন; তাঁদের মধ্যে একমাত্র প্রতিভাদিদির—সেজমামার কন্যার—কখনো কখনো স্থান হত।

 কর্মজীবনে যে তৎপরতা রবীন্দ্রনাথের বিশিষ্টতা হয়ে দেখা দিয়েছিল এখনি তার একটু আভাস পাওয়া গেল। আর শেষদিন পর্যন্ত ছাপান কাগজের জন্যে অপেক্ষা নয়। দিন দুয়েক হাতে হাতে নকল করা

৩০