পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সাহেবকে আনালেন—তিনি মেস্‌মেরাইজ করে সারিয়ে দেবেন বলে। মেস্‌মেরিস্ট বলে অল্‌কট সাহেবের বিশেষ খ্যাতি ছিল। তিনি এসে দুটো-চারটে ‘পাস’ দিয়ে আমায় বল্লেন—‘ওঠ!’ আমি বল্লম—‘অসম্ভব। ঘাড় তুলতে পারছিনে, এপাশ-ওপাশ করতে পারছি নে, উঠব কি করে?’ তিনি বল্লেন—‘পারবে। ওঠ।’ বলে আমার হাত ধরলেন। আমি ভয়ে ভয়ে মাথা তুলতে চেষ্টা করলুম—দেখলুম, আশ্চর্য—পারছি ত; ঘাড়ে লাগল না ত! আমার হাতে হাত রেখে অল্‌কট আমায় একেবারে উঠিয়ে বসালেন—ঘাড়ে তখন খট্ করে একটা শব্দ হল, এক মুহূর্তের জন্যে তীব্র ব্যথা বোধ হল, কিন্তু উঠতে পারলুম। অল্‌কট একটা গ্লাসে খানিকটা জল মন্ত্রপূত করে রেখে গেলেন, দু-তিন ঘণ্টা অন্তর একটু একটু খেতে বল্লেন। তার পরদিন সন্ধ্যেবেলায় আর একবার এলেন, বল্লেন—“ভাল হয়ে গেছ। দেখ কিচ্ছু ব্যথা নেই।” সত্যিই তাই দেখলুম। মেস্‌মেরিজমের উপর বাড়িসুদ্ধ সকলের শ্রদ্ধা খুব বেড়ে গেল। তখন থেকে মেস্‌মেরিজমের নানারকম phenomena পরখ করার জন্যেও সকলের ভারি আগ্রহ হল। থিয়সফির সভায় যেসব মেয়েরা আসতেন, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন—ভবানীপুরের নবীন বাঁড়ুয্যের বোন বলে প্রখ্যাতা। তিনি সন্ন্যাসিনীর বেশ ধারণ করতেন। তাঁর একটি ভাইঝি সঙ্গে আসত, সে তার স্বামীকে ত্যাগ করেছিল, স্বামী তাকে চায়; কিন্তু সে স্বামীকে চায় না—সে চায় নির্বাণের পথে যেতে। এই পরিবারের সবাই অদ্ভুত। নবীন বাঁড়ুয্যের ছেলেটি মেস্‌মেরিজমে সিদ্ধপুরুষ হয়ে গিয়েছিল। সে এক একদিন এসে তার কেরামতি দেখাত। একজন ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে আধঘুমন্ত অবস্থায় সাপ-ব্যাঙ যা খুশি দেখাত, নিজের ইচ্ছামত উঠাত বসাত, হাসাত কাঁদাত।

 দিনুর মা সুশীলা বৌঠানও থিয়সফিক্যাল সোসাইটির মেম্বর ছিলেন। একদিন আবিষ্কার হল যে তাঁর ভিতরও মেস্‌মেরাইজ করার ক্ষমতা আছে। তাঁর একটি পালিতা দাসীপুত্রী ছিল—নাম তার নির্মলা। তাকে তিনি মাঝে মাঝে মেস্‌মেরাইজ করতে লাগলেন। বৌঠান আড়াল থেকে তিত-মিষ্টি যা কিছু খেতেন—ঘুমন্ত নির্মলার মুখে সেই স্বাদ আসত। এ বিষয়ে যাতে সে ঠকাতে না পারে, যাতে মট্‌কা মেরে পড়ে থেকে মিট্‌মিট্‌ করে চেয়ে দেখে টের না পায় কি খাওয়ান হল বৌঠানকে, তার জন্যে আমরা অনেক কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতুম। ঠকাবার উপায়ই ছিল না। সত্যি-সত্যিই সে মেস্‌মেরিক নিদ্রাগ্রস্ত অবস্থাতেই সব

৫৮