পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রিনিঝিনি, মঞ্জু মঞ্জু মঞ্জীরে, রিনিঝিনি ঝিন্নিরে!” এ গানটা যে কতবার আমাকে দিয়ে গাইয়েছেন ঠিক নেই। আমার সঙ্গে তাঁদের খুব মনের মিল হয়ে গেল। নন্দীবাঈ শুধু গান না, গান রচনাও করেন। আমার প্রেমিক হয়ে পড়লেন তিনি, আমার উপর একটা গানই বেঁধে ফেল্লেন। এই পরিবারের সঙ্গে ভাব আমার আজ পর্যন্ত অটুট আছে। অনেকেরই অবস্থান্তর ঘটেছে—ক্রোরপতি থেকে প্রায় কপর্দকহীন হয়েছেন, অনেকেই ইহলোক থেকে চলে গেছেন। কিন্তু যাঁরা বাকী আছেন, অর্থবান হোন নিঃস্ব হোন—আজও বম্বে গেলে আমি তাঁদের খুঁজে পেতে বের করে দেখা করি।

 পুণায় যেবার কংগ্রেস হয়, বাবা-মহাশয়ের সঙ্গে মেজমামা-প্রমুখ আমাদের যেসব আত্মীয়রা দর্শক হয়ে যান, নারাণজী তাঁদের সকলকে নিজের অতিথি করে রাজার হালে রাখেন। আমি সেবার সদ্য মহীশূর গেছি, তাই পুণায় আসতে পারিনি। কিন্তু শুনলুম তাঁদের অতিথিসৎকার যে মাত্রায় হয়েছিল তা বর্ণনীয় নয়।

 বম্বের আর এক পরিবারে আমার গান জমেছিল খুব। সে সম্পূর্ণ বিপরীত circle-এ—মুসলমান মণ্ডলে। জস্টিস বদ্রুদ্দিন তায়েবজীর ভাইঝি-জামাই মিস্টার আকবর হায়দরী কলিকাতায় Accounts Department-এর বড় অফিসার হয়ে আসেন। ইনিই পরে হায়দ্রাবাদের প্রধান মন্ত্রী হন। তাঁর পত্নী আমিনাও স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় আসেন। আমার এক পার্শী পরম বন্ধু ছিলেন বরজোরজি পাদশা, বৃদ্ধ জমসেটজি টাটার দক্ষিণ হস্ত। ইনি হায়দরীদেরও বন্ধু। তাঁর কাছ থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে হায়দরীরা আমার উপর call করে আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। অতি সরল সহজ বন্ধুত্ব হয়ে গেল ওঁদের সঙ্গে আমার—এমন কি তাঁদের ছেলেমেয়ের জন্যে যে মৌলবী সঙ্গে এসেছিল, সেই ‘ওস্তাদজি’র কাছে হপ্তায় ২।৩ দিন মূল ফার্সিতে ওমর খৈয়ম পড়ার বন্দোবস্ত করে দিলেন আমার। আমার ফার্সি পড়ার সখ অনেক দিন থেকে। একবার মেজমামার সঙ্গে বম্বের Watson Hotelএ গিয়ে যখন হপ্তাখানেক থাকি, তার স্বত্বাধিকারী মেজমামার একজন মুসলমান বন্ধু হোটেলে প্রায়ই একবার করে আসতেন আমাদের তদারক করতে। তিনি একদিন একটা কার্ডে চার লাইন উর্দু কবিতা লিখে আমায় উপহার দিলেন। উর্দু পড়তে পারিনে, তিনিই পড়ে শোনালেন ও উর্দু কবিতার রসমাধুর্য বুঝিয়ে দিলেন। উর্দু লেখাটি যেন ছবির টানের মত সুন্দর, কিন্তু

৭৮