পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 খুসী ও অবলাদিদি—লেডি বোস—বাঙালী মেয়েদের সঙ্গে বাঙলা স্কুলে মানুষ। অবলাদিদি উত্তরজীবনে তাঁর কার্যে-কলাপে আচারেঅনুষ্ঠানে প্রতি পদে পদে স্বদেশ ও স্বদেশী-প্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। আর সরলাদিদির সম্বন্ধে জনশ্রুতি এই যে, বেঙ্গল পার্টিশন আন্দোলনের সময় একদিন তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজের সামনে দিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিলেন। তাঁর গাড়িতে হোয়াইটওয়ে লেডলর দোকান থেকে নেওয়া বিদেশী সওদা বোঝাই করা ছিল। স্বদেশীমত্ত একদল ছেলে তাঁর গাড়ি রুখে গাড়ির সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়ে তাঁকে অনুরোধ করলে—“মা বিদেশী জিনিসগুলো ফেলে দিন, নয়ত আমাদের বুকের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যান।’’ সেদিন ফলে কি হল ইতিহাসে তা লেখে না। কিন্তু সরলাদিদির বিদেশী ব্যবহার কোনদিন কম হতে দেখি নি। ‘গোখলে মেমোরিয়াল স্কুল’—তাঁর কীর্তি, যেমন ‘ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়’ বলতে গেলে—অবলাদিদিরই কীর্তি। এই দুই স্কুলের পরিচালনার বিভিন্ন আদর্শেই দুই বোনের মনস্তত্ত্বের ভিন্নতা সুপরিস্ফুট।

 খুসীর ভিতর কর্মবেগ ছিল না, কিন্তু আমাদের বাড়ির সংসর্গে ভাবেতে ও রুচিতে স্বদেশী হয়ে উঠেছিল। কর্মের দিক থেকেও একটি কর্মে সে আমার মায়ের সহায়তা করেছিল। পূর্বে বলেছি বৃত্তি দিয়ে শিক্ষয়িত্রী প্রস্তুত করে অন্তঃপুরে পাঠানর লক্ষ্য সখিসমিতির ছিল। সে লক্ষ্য সিদ্ধ হওয়া সময়-সাপেক্ষ; কারণ যে সব মেয়েদের বৃত্তি দেওয়া হতে লাগল, তারা নিজেদের পড়াশুনা সাঙ্গ করে উপযুক্ত হলে তবে ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়াবে। ইতিমধ্যে কিন্তু দুই এক বাড়ি থেকে আবেদন আসল শিক্ষয়িত্রীর জন্যে। খুসীর তখন বিয়ে হয়েছে—বিডন স্ট্রীটে বাঙালী পাড়াতে থাকে। তখনও তার সন্তানসন্ততি হয় নি। সে মাকে বললে—“আমার হাতে অনেক সময় রয়েছে, আমি যাব পড়াতে। ছাত্রীরা যে মাইনে দেবে সেটা সখিসমিতির ফণ্ডে জমা হোক।” খুসী যতদিন যেতে পারলে ততদিনই কিন্তু সখিসমিতির এই কাজটি চলল। কারণ বৃত্তিধারিণী মেয়েরা কেউ কার্যক্ষেত্রে নামেন নি। বৃত্তিবলে শিক্ষাপ্রাপ্তা মেয়েদের ভাগ্যে বর জোটার ছোঁয়াচ লাগল। বৃত্তি গ্রহণের সময় একটা সর্তে তাদের বা তাদের অভিভাবকদের স্বাক্ষর দিতে হয়েছিল। তার মর্ম ছিল যে—এত বছর ধরে লেখাপড়া শিখে উপযুক্ত হবার পর এত বছর সখিসমিতির কাজ করতে হবে, না করলে তার জন্য সখিসমিতি যত টাকা খরচ করেছে ততটা টাকা সখিসমিতিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

৮৪