পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হিমালয় যাত্রা
৯৭

লম্বা সমাস সঁথিয়া যেখানে-সেখানে যথেচ্ছ অনুস্বার যোগ করিয়া দেবভাষাকে অপদেবের যােগ্য করিয়া তুলিতাম। কিন্তু পিতা আমার এই অদ্ভুত দুঃসাহসকে একদিনও উপহাস করেন নাই।

 ইহা ছাড়া তিনি প্রক্টরের লিখিত সরলপাঠ্য ইংরেজি জ্যোতিষগ্রন্থ হইতে অনেক বিষয় মুখে মুখে আমাকে বুঝাইয়া দিতেন; আমি তাহা বাংলায় লিখিতাম।

 তাহার নিজের পড়ার জন্য তিনি যে-বইগুলি সঙ্গে লইয়াছিলেন তাহার মধ্যে একটা আমার চোখে খুব ঠেকিত। দশ বারাে খণ্ডে বাঁধানাে বৃহদাকার গিবনের রােম। দেখিয়া মনে হইত না ইহার মধ্যে কিছুমাত্র রস আছে। আমি মনে ভাবিতাম-~~আমাকে দায়ে পড়িয়া অনেক জিনিস পড়িতে হয়, কারণ আমি বালক, আমার উপায় নাই—কিন্তু ইনি তো ইচ্ছা করিলেই না পড়িলেই পারিতেন, তবে এ দুঃখ কেন?

 অমৃতসরে মাসখানেক ছিলাম। সেখান হইতে চৈত্র- মাসের শেষে ড্যালহৌসি পাহাড়ে যাত্রা করা গেল। সার মাস আর কাটিতেছিল না। হিমালয়ের আহ্বান আমাকে অস্থির করিয়া তুলিতেছিল।

 যখন ঝাপানে করিয়া পাহাড়ে উঠিতেছিলাম তখন পর্বতের উপত্যক-অধিত্যক-দেশে নানাবিধ চৈতালি ফসলে স্তরে স্তরে পংক্তিতে পংক্তিতে সৌন্দর্যের আগুন লাগিয়া গিয়াছিল। আমরা প্রাতঃকালেই দুধরুটি খাইয়া বাহির হইতাম এবং অপরাহে ডাকবাংলায় আশ্রয় লইতাম। সমস্ত-