পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঁৱৰে ; দেখিয়ে দেবে যে তার অধিকার ছিল বই দাবি করার, তবে রাখালকে মায়া তার উচিত হয় নি। খারাপ লাগছে, না ? মুন্সেফ সুরেনবাবু কঁাধে হাত রেখে সক্ষেহে জিজ্ঞাসা করে। শান্ত স্নিগ্ধ মিষ্টি তার মুখখানা, একটু শীর্ণ। সুন্দর কীৰ্ত্তন গাইতে পারে। এখানে বদলি হয়ে এসে কয়েক মাসের মধ্যে শহরের শিক্ষিত ভদ্ৰসমাজকে কীৰ্ত্তন শুনিয়ে মুগ্ধ করে দিয়েছে। এমনি তার কথাবাৰ্ত্তা চাল-চলন বা খাওয়া পরা জীবন যাপনে বৈষ্ণবত্বের কোন লক্ষণই প্ৰায় ধরা পড়ে না, মাছ মাংস খায়, ইংরেজী সাহিত্যই বেশী পড়ে, শ’কে নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহী, দশজনের মতই সাধারণভাবে দশজনের সঙ্গে মেলে মেশে, হাসি গল্প করে। সরলতা আর নম্র মিশুক স্বভাবের শুধু একটা আকর্ষণ তার আছে, তাকে সকলের ভাল লাগে। কিন্তু কীৰ্ত্তনে মানুষটা সত্যই গুণী। আসরে গাইতে নামলে তার মধ্যে আশ্চৰ্য্য এক পরিবর্তন আসে, সে জীবন্ত প্ৰাণবন্ত হয়ে ওঠে, নিজেও বিভোর হয়ে যায় কীৰ্ত্তনে, উপস্থিত সকলের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। খাটি আবেশ, গভীর ব্যাকুলত । প্ৰকাশও দু-তিনবার তার কীৰ্ত্তন শুনতে গিয়ে ভেতরে জোরালো নাড়া খেয়ে এসেছে। কিছুদিন আগে সে কীৰ্ত্তন শিখতে আরম্ভ করেছিল সুরেনের কাছে। তার গলার সাধারণ গান শুনে সুরেনও আগ্রহের সঙ্গে তাকে শেখাতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই শেখার আগ্রহে প্ৰবল জোয়ার-ভাটার খামখেয়ালি লীলাখেলা দেখে শিষ্যের কীৰ্ত্তন গাওয়ার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তার মনে রীতিমত খটকা লেগেছে। তার স্নেহ ও সহানুভূতিতে ফাকি ছিল না। শিস্য বড়ই প্রিয় পদার্থ-স্নেহ করতে ভাল লাগে, অবশ্য যদি বশদ্বাদ হয়। কিন্তু খাটি জিনিসটাও এখন ক্লেদের মত লাগল পাকার কাছে। ভৈরব উঠে চলে গেছে ; শান্ত নির্বিবকার ভাবে এর ওর তার সঙ্গে দু-একটি কথা বলতে বলতে। পাকা জানে, আজ এখানে এখন ভৈরব দশজনের চোখের সামনে অনন্তের সঙ্গে একটা কথাও বলবে না, দু’জনের যেন চেনা পরিচয়ও নেই। যদিও সকলেই জানে তারা আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠ । অনন্তকে ঘিরে ভদ্রলোকের ভিড় ক্ৰমে ক্রমে বাড়ছে। R