পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কান্না যেন গলায় এসে ঠেকে রয়েছে, নামবে না। ও বিষাদকে বড় ভয় করে পাকা, ঠিক যেন মা মরে যাবার ভয়ানক দিনগুলিকে আবার অনুভব করে। । মরিয়া হয়ে সে খারাপ পাড়ায় যায় । এ মন্দ কি, হোক অন্যায়। পাড়ায় ঢুকবার আগে থেকেই উত্তেজনায় তার বুক কঁপিছে। আজকের সঙ্গে সেদিনের মজা দেখতে আসার তুলনা হয় না। সেদিন এসেছিল সন্ধ্যার আগে, তখনো দিনের আলো ছিল। আজ রাত দশটা বেজে গেছে। এসব পাড়ার আসল যা পরিচয়, নাচগান বাজনা, মাতলামি গুণ্ডামি, মারামারি খুন জখম, সে তো শুরু হয় বেশি রাত্রে। অনেক দিন থেকেই মনে মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাধটা, বেশি রাত্রে একবার এসে দেখে যাবে এই ভয়ঙ্কর রহস্যপুরীর কাণ্ড কারখানা, যেখানে রাত কাটানোর অপরাধে তার সেজমামাকে ভৈরব দূর দূর করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে যাতায়াত করে বলে পরমেশবাবুকে পাড়ার লোকে এত ভয় আর ঘূণা করে। সরু সরু আঁকাবঁকা গলি, আবছা অন্ধকার, গা ছমছম করে। দূরে দূরে থামের মাথায় টিমটিমে তেলের বাতি, আলো দেয় না, প্ৰমাণ দেয় না যে শহরে মিউনিসিপালিটি আছে। সেটা দখল করবার জন্য দুদিন বাদে ভৈরব আর ভুবনের মধ্যে লড়াই লাগবে। পান সিগারেটের দোকানের আলোগুলি তেজী, দু-একটাতে আবার ডে-লাইট টাঙ্গিয়েছে। কোনো কোনো বড় বাড়ীর সামনে রোয়াকে বা ভেতরে ঢুকবার প্যাসেজে সেজোগুজে মেয়েরাও এসে দাডিয়ে আছে। ডে-লাইটের আলোয়, তবে বেশির ভাগই টিমটিমে লণ্ঠন। তেমন যেন সরগরম নয়। আজ পাড়াটা, সেদিন সন্ধ্যায় যত দেখেছিল মেয়েগুলিও যেন তার চেয়ে সংখ্যায় অনেক কম। এবাড়ী ওবাড়ীতে তবলা হরমোনিয়মের সঙ্গে গান চলছে, নাচের আওয়াজও পাওয়া যায়৷ হৈ-চৈ হুল্লোড়ের শব্দ শুধু এল একটা বাড়ীর ভেতর থেকে, তাও অল্প লোকের সামান্য গলাবাজি । রাস্তায় লোকও চলাচল করছে কম। একটু দমে যায় পাকা, তার আগ্রহ আর উত্তেজনা বিমিয়ে আসে । হঠাৎ বুকটা তার ধড়াস করে ওঠে তারই বয়সী একটি ছেলের মুখোমুখি হয়ে। ছেলেটি বেরিয়ে এসেছে পাশের বাড়ীর দরজা দিয়ে। সেখানে Rz