পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোটা দুই তিন কঠিন কথা
২৫

অবিদ্যাবদ্বিষয়ানি

 ইহাদের চক্ষে, সাক্ষ।ৎ ব্রহ্মানুভূতি না হওয়া পর্যন্ত জীব যা কিছু সাধন ভজন করুক না কেন, সকলই পারমার্থিক দৃষ্টিতে মিথ্যা, সকলই অবিদ্যাবদ্বিষয়ানি। বিষয়, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার, -এ সকলই মায়াধীন, মায়াভিভূত। জীব যতক্ষণ না এ সকলকে একন্তভাবে অতিক্রম করিতে পারিয়াছে, ততক্ষণ তাহার আত্মসাক্ষাৎকার লাভ হয় না। ততক্ষণ সে যে কোনো প্রকারের উপাসনায় নিযুক্ত হউক না কেন, তৎসমুদায়ই মায়িক, মিথ্যা, কল্পিত! সমাধিতে আত্মসাক্ষাৎকার হয়। সমাধিতে সকল ইন্দ্রিয় রুদ্ধ হইয়া যায়। সে অবস্থায় দ্রষ্টা স্বরূপে অবস্থান করেন; আর তখন কঃ কেন পশ্যেৎ-কে কাহার দ্বারা কা’কে দেখে, কে কিসের দ্বারা কা’কে শোনে—সকলই ব্রহ্মাত্মৈকত্বে একীভূত হইয়া কেবল অ।নন্দঘন মাত্র অনুভূত হয়। তখন উপাস্য উপাসকের সম্বন্ধও লুপ্ত হয়। এই জন্য অদ্বৈত সিদ্ধান্তে উপাসনামাত্রেই ভেদাত্মক বলিয়া, মিথ্যা। কিন্তু মিথ্যা হইলেও, নিস্ফল নহে। কারণ ইহার দ্বারাই ক্রমে শুদ্ধচিত্ত হইয়া সাধক অদ্বৈততত্ত্বে প্রবেশ করেন। নিম্ন অধিকারীর জন্য উপাসনাদি নিত্য কর্ম্মরূপে বিহিত হয়।

চতুর্থ অধ্যায়।

স্বরূপোপাসনা, সম্পদুপাসনা ও প্রতীকোপাসনা

 আর এই নিম্ন অধিকারেও শ্রেষ্ঠ নিকৃষ্ট ভেদ আছে। ফলতঃ বেদান্তে তিনপ্রকার উপাসনার বিধান আছে। স্বরূপোপাসনা, সম্পদুপাসনা ও প্রতীকোপাসনা। স্বরূপেপাসনা—ব্রহ্মাত্মৈকত্ববোধ; ইহাকে প্রকৃতপক্ষে উপাসনা। বলা যায় না; কারণ। স্বরূপোপলব্ধিতে উপাস্য-উপাসক