পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
প্রথম চিন্তা

ভেদ থাকে না। স্বরূপোপাসনায় যতক্ষণ অধিকার না জন্মে, ততক্ষণ সম্পদুপাসনা বা প্রতীকোপাসনা বিহিত হয়। ইহার মধ্যে সম্পদুপাসক মধ্যম অধিকারী, প্রতীকোপাসক নিকৃষ্ট অধিকারী।

সম্পদুপাসনা

 দুই বস্তুর মধ্যে কোন সামান্য ধর্ম্ম দেখিয়া, ক্ষুদ্রতরের সাহায্যে বৃহত্তরের যে জ্ঞান জন্মে, তাহার নাম সম্পদজ্ঞান। ভূগোল শিখিবার কালে ক্ষুদ্র কমলালেবুর সাহায্যে বৃহৎ ও অপরিমেয়প্রায় যে এই পৃথিবী তাহার আকারের জ্ঞান সাধিত হয়, এ জ্ঞান সম্পদজ্ঞান। দৃষ্ট ও পরিমিত কমলালেবুর সঙ্গে অদৃষ্ট ও প্রায় অপরিমিত পৃথিবীর আকার সাদৃশ্য আছে। সুতরাং ভূগোলে পৃথিবী কমলালেবুর মত গোলাকার। এই উপদেশ দিয়া পৃথিবীর আকারের জ্ঞান জন্মায়। পৃথিবী যদি উপাস্য হইতেন, তবে কমলালেবু অবলম্বনে তাহার যে উপাসনা হইত, তাহাকে সম্পদুপাসনা বলা যাইতে পারিত।

প্রাণোপাসনা

 প্রণোপাসনা ও সূর্য্যোপাসনা উভয়ই সম্পদুপাসনা। নিরাকারবাদীও প্রাণরূপে ব্রহ্মের উপাসনা করিয়া থাকেন। কিন্তু তাঁহারা ইহাকে স্বরূপেপাসনা বলিয়াই গণনা করেন। ফলতঃ প্রাণতত্ত্বে ও পরাতত্ত্বে ও ব্রহ্মতত্ত্বে, প্রভেদ বিস্তর। উপনিষদে ব্রহ্মকে প্রাণরূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে —‘যিনি সর্ব্বভূতে প্রকাশ পাইতেছেন, তিনি প্রাণ-স্বরূপ।’ কিন্তু এখানে প্রাণ বলিতে বিশ্বপ্রাণ বোঝায়। জীবে যাহা ধর্ম্মভাবে প্রাণরূপে প্রকাশিত হয়, তাহা নহে, কিন্তু যে নিত্যবস্তুকে আশ্রয় করিয়া এ সকল প্রাণ স্থিতি করিতেছে তাহাকেই এখানে প্রাণ বলা হইয়াছে। এ প্রাণ অদ্বৈত বস্তু। আমার, তোমার, তাহার-—এবষিধ উপাধি এ প্রাণে