পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
১২৩

চেহার কারো কাছে ছিল না। আমি পুরাতন বাক্স খুঁজে সেই ছবি বের করে পাঠাই, তার আত্মীয়-স্বজন খুব খুশি হয়ে আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন। ভাগ্যিস তাঁর চেহারা নোট করে রেখেছিলুম।

 যাক ওকথা। তেলরঙ তো হল। এবার জলরঙের কাজ শেখবার ইচ্ছে। মাকে বলে আবার তাঁর কাছেই ভরতি হলুম। এখন ল্যাণ্ডস্কেপ আর্টিস্ট হয়ে, ঘাড়ে ‘ইজেল’ বগলে রঙের বাক্স নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলুম। কিন্তু কতকাল চলবে আর এমনি করে? তবু মুঙ্গেরের ওদিকে ঘুরে ঘুরে অনেকগুলি দৃশ্য এঁকেছিলুম।

 কিছুদিন তো চলল এমনি করে, মন আর ভরে না। ছবি তো এঁকে যাচ্ছি, কিন্তু মন ভরছে কই? কি করি ভাবছি, রোজই ভাবি কি করা যায়। এদিকে স্টুডিয়ো হয়ে উঠল তামাক খাবার আর দিবানিদ্রার আড্ডা। এমন সময়ে এক ঘটনা। শুনতেম আমার ছোটদাদামশায়ের চেহারা অতি সুন্দর ছিল, কিন্তু আমাদের কাছে তার একখানাও ছবি ছিল না। আমি তাঁর ছবির জন্য খোঁজখবর করছিলুম নানা জায়গায়। তখন বিলেত থেকে এক মেম মিসেস মার্টিনডেল খবর পেয়ে লিখলেন, ‘তুমি তাঁরই নাতি? বড় খুশি হলুম। তাঁর সঙ্গে আমার বড় ভাব ছিল। তোমার বিয়েথাওয়া হয়েছে! তোমার মেয়ের জন্য আমি একটা পুতুল পাঠাচ্ছি।’ বলে প্রকাণ্ড একটা বিলিতি ডল নেলিকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তখন খুবই বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু কি রকম আশ্চর্য তাঁর মন ছিল; কোন্‌কালে আমার ছোটদাদামশায়ের সঙ্গে তাঁর ভাব ছিল, সেই সূত্রে আমাকে না দেখেও তিনি নগেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি বলেই স্নেহ করতে চাইতেন। তিনি বিলেত থেকে লিখলেন, ‘তোমার আর্টের দিকে ঝোঁক আছে,—আমিও একটু আধটু আঁকতে পারি। বলো তোমার জন্য আমি কিছু করতে পারি কিনা।’ তিনি আরো লিখলেন, ‘তুমি যদি কিছু দাও তো তার চারদিকে ইলুমিনেট করিয়ে দিতে পারি।’ বইয়ের লেখার চারদিকে নকশা আঁকা থাকে, খুব পুরোনো আর্ট ওঁদের, তাই একটা এঁকে পাঠাবেন। ভাবলুম, তা মন্দ নয় তো। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি গরিব, এজন্য কিছু দিতে হবে।’ পাঠিয়েছিলুম কিছু দশ কি বারো পাউণ্ড মনে নেই ঠিক। আইরিশ মেলডিজের কবিতা ছোটদাদামশায়ের বড় প্রিয় জিনিস ছিল। ভাবলুম, সেটাই যত্ন করে রাখবার বস্তু হয়ে আসুক। কিছুকাল বাদে তিনি পাঠিয়ে দিলেন দশ-বারোখানা বেশ বড় বড় ছবি—সে কি সুন্দর, কি বলব তোমায়। থ হয়ে গেলুম ছবি দেখে।