বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৭৯

 সুমধুর স্মৃতি তেমন ছিল না জীবনে। তবে কবির সঙ্গ পেয়েছি, সেই ছিল জীবনের একটা মস্ত সম্পদ। মাও বুঝতেন, বলতেন, ‘রবির সঙ্গে আছিস, বড় নিশ্চিন্ত আমি।’


১১

 কর্মজীবন বলে আমার কিছু নেই, অতি নিষ্কর্মা মানুষ আমি। নিজে হতে চেষ্টা ছিল না কখনো কিছু করবার, এখনো নেই। তবে খাটিয়ে নিলে খাটতে পারি, এই পর্যন্ত। তাই করত, আমায় সবাই খাটিয়ে নিত। বাড়িতে কোনো ক্রিয়াকর্ম হলে সহজে হাত লাগাতুম না কিছুতে। কিন্তু যদি কোনো কাজের ভার পড়ত ঘাড়ে নিঁখুত করে সেই কাজ উদ্ধার করে দিতুম। হ্যাভেল সাহেব বসিয়ে দিলেন আর্ট স্কুলে। ছাত্র ধরে দিলেন সামনে, বললেন, ‘আঁকো, আঁকাও।’ তার মধ্যে আর একটা মানেও ছিল। বলতেন অনেক সময়েই যে, ‘ভালো ঘরের ছেলেরা যদি আর্টের দিকে ঝোঁকে পাবলিকের নজর পড়বে এদিকে। দেশের লোক তোমাদের কথায় বেশি আস্থা রাখবে।’ নেহাত মিছে বলতেন না। নয় তো তখনকার আর্ট স্কুল সম্বন্ধে লোকের ধারণাবদলাত না।

 আর্ট সোসাইটি খুলে উডরফ ব্লাণ্টও খাটিয়ে নিতেন আমায়।

 রাজা এলেন, ময়দানে মস্ত প্যাণ্ডেল তৈরি হল, রাজার বসবার মঞ্চ উঠল। উডরফ বললেন, ‘মঞ্চের চারদিকে তোমায় এঁকে দিতে হবে।’ পি. ডাবলিউ. ডির লোকেরাই ফ্রেমে কাপড় লাগিয়ে সব ঠিকঠাক করে এসে ধরলে সামনে। লাগিয়ে দিলুম ছাত্রদের, নিজেও হাত লাগালুম; হয়ে গেল মঞ্চ ডেকোরেশন। রাজার সিম্‌বল্‌ দিয়ে ছবি এঁকে দিয়েছিলুম, খুব ভালো হয়েছিল। হাজার বারোশো টাকাও পাওয়া গিয়েছিল। পরে রাজা চলে গেলে সেই ছবিগুলো বর্ধমানের রাজা কিনে নিলেন ছ-শো টাকা দিয়ে, নিয়ে তাঁর কোন্‌ এক ঘর সাজালেন। আমাদের ভালোই হল। এ-হাতেও টাকা পেলুম ও-হাতেও টাকা পেলুম, সব টাকা ভাগাভাগি করে বেঁটে দিলুম ছাত্রদের। আমাকে দিয়ে খাটিয়ে নিলে কোমর বেঁধেই লাগতুম, কাজও ভালো হত। আসলে ভিতরে তাগাদাও ছিল কিনা একটা। তবে না করিয়ে নিলে ছবিও আমার হত না বোধ হয়। বড় কুঁড়ে স্বভাব আমার ছেলেবেলা থেকেই; কোথাও নড়তে পর্যন্ত