পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৮৫

ভালো কিছু হাতে এলেই নিয়ে আসে আমাদের কাছে। একদিন নিয়ে এল কয়েকটা পুরোনো টিনের কৌটোভরা নানারকমের পাথর। তার মধ্যে ওই পান্নাটি দেখেই আমার কেমন লোভ হল। তাড়াতাড়ি হাতে তুলে নিলুম। বললুম, ‘এটি কত হলে দেবে? টাকা পঞ্চাশেক হলে চলবে তো?’ বুড়ো জহুরী ঘাগি লোক; চোখ দেখেই বুঝেছিল, জিনিসটি খুবই পছন্দ হয়েছে আমার। দাম বাড়াবার ইচ্ছে না কি? বললে, ‘তা আমি ঠিক করে এখন বলতে পারছিনে। পরে জানাব।’ এই বলে সেদিন সেটি নিয়ে চলে গেল। মনটা আমার খারাপ হয়ে গেল, বড় সুন্দর পান্নাটি ছিল। লোভও হয়েছিল খুব রাখবার, নিয়ে গেল চোখের সামনে থেকে। তা কি আর করব। গেল তো গেল। বুড়োর আর দেখা নেই।

 মাস ছয়েক পরে তার ছেলে এল একদিন, নেড়া মাথা। বললে, ‘বাবা চলে গেছেন।’ বললুম, ‘সে কি রে। এই যে সেদিনও এসেছিল পুরোনো পাথর নিয়ে। তা তুই এখন কি করছিস?’ সে বললে, ‘আমিই বাবার দোকান দেখাশুনো করি। আপনারা আমার কাছ থেকে পাথর মণি মুক্তো কিনবেন না কিছু? বরাবর তো বাবাই আপনাদের দিতেন এসে যা চাইতেন। আমার কাছ থেকেও তেমনি নেবেন দয়া করে।’ তাকে বললুম, ‘দেখ্‌, শেষবার তোর বাবা এনেছিলেন একটি পান্না। আমার পছন্দ হয়েছিল, দামও বলেছিলুম পঞ্চাশ টাকা। কয়েকদিন বাদে সে আসবে বলে গেল, আর তো এলো না। সেই পাল্লাটি আমায় এনে দিতে পারিস?’ পুরোনো খদ্দের হাতে রাখবার বাসনা, পরদিন দেখি ছেলেটি ঠিক খুঁজেপেতে নিয়ে এল সেই পান্নাটি একটি মরচে পড়া টিনের কৌটোয় পুরে। বললুম, ‘দাম কত চাস?’ সে বললে, ‘বাবার সঙ্গে যা কথা হয়েছে তাই দেবেন।’ টাকা নিয়ে সেদিন সে চলে তো গেল। ছেলেমানুষ পান্নার মূল্য বোঝেনি হয়তো। কয়েকদিন বাদে কার সঙ্গে কি কথা হয়েছে, সে এসে হাজির। বললে, ‘একটি ভুল হয়ে গেছে।’ বললুম, ‘আর ভুল। দস্তুরমত পান্নাটি কিনেছি আমি। রসিদ দিয়ে তুমি টাকা নিয়েছ। এখন ভুল বললে শুনব কেন? এই পান্নাটি তোমার বাপের কাছে চেয়েছিলুম সেবারে, পেলুম না। হাতছাড়া হয়ে গেল, আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলুম আমি। এবারে তোমার কাছ থেকে আমি কিনেছি, আর কি হাতছাড়া করি? সে চলে গেল। তারপর বোম্বের ঠাকুরদাস জহুরী আসতে তাকে পান্নাটি বের করে দেখাই। সে তো হাতে নিয়ে অবাক। বললে, ‘এ জিনিস আপনি পেলেন কোথায়? এ যে অতি দুর্লভ পান্না, বহুমূল্য জিনিস। এইরকম ফুল-