খোদাইকরা পান্না মোগল আমলেই ব্যবহার হত শুধু। ঠাকুরদাস বললেন, এর এক রতির দাম পাঁচশো টাকা। পান্নাটির ওজন হল বেশ কয়েক রতি। বললে, ‘আপনি পঞ্চাশ টাকায় কিনেছেন আমি এখনি ছশো টাকা দিতে রাজি আছি এটির জন্য।’
সেই পান্নাটি, আর একটি দুর্লভ মোহর ছিল আমার কাছে, তার একদিকে জাহাঙ্গীর আর একদিকে নূরজাহানের ছবি। রাখালবাবু দিয়েছিলেন আমায়, একশো টাকা দিয়ে কিনেছিলুম। এই মোহর আর পান্নাটি দিয়ে একটি ব্রোচ তৈরি করালুম আমাদের বিশ্বস্ত জহুরীকে দিয়ে। সেই পাল্লাটির চারদিকে ছোট ছোট মুক্তো, আর মোহরটি ঝুলছে পান্নাটির নিচে। ব্রোচটি অলকের মাকে দিলুম। তিনি প্রায়ই কাঁধের উপরে ব্যবহার করতেন সেটি, বেশ লাগত। সেই একবার খুব পান্নার বাতিক হয়েছিল।
ভেবেছিলুম খুঁজতে খুঁজতে কোহিনুর-টোহিনুর পেয়ে যাব হয়তো একদিন। পেলুম না। কিন্তু তার চেয়েও বেশি আজকাল আমার এই কাঠকুটো কুটুমকাটাম—কোথায় লাগে এর কাছে কোহিনুর মণি। আমার ফটিকরানী, কোনো কোহিনুর দিয়ে তৈরি হবে না। ভাঙা ঝাড়ের কলমটি নমিতা এনে দিলে। ওডিকোলনের একটা বাক্স, সামনেটায় কাঁচ দেওয়া, তাকে শুইয়ে দিলুম সেই কাঁচের ঘরে, বললুম, ‘এই নাও আমার ফটিকরানী ঘুমোচ্ছে। রেখে দাও যত্ন করে।’ ইচ্ছে ছিল, আর একটি সবুজ রঙের কাঠি পেলে শুইয়ে দিতুম পাশাপাশি, থাকত দুটিতে বেশ।
সেই পান্নার বাতিকের সময়ে—আর একটি লোক এল একদিন, জব্বলপুরে পাওয়া যায় নানারকম পাথর, বহু পুরোনো পোকামাকড় গাছপালা পাথর হয়ে গেছে, সেই সব নিয়ে। ভারি সুন্দর সুন্দর পাথর সব। তার মধ্যে একটি ছিল ঠিক গোল নয়, বাদামের মতো গড়নটি দেখতে, রঙটি অতি চমৎকার। পছন্দ হল, কিন্তু দাম বেশি চাইল বলে রাখলুম না। লোকটি তার সব পাথর দেখিয়ে খানিক বাদে চলে গেল। বসে আছি বারান্দায় চুপচাপ। সমরদার ছোট নাতনিটি এসে সেখানে খেলা করতে লাগল। দেখছি সে খেলা করছে আর অনবরত মুখ নাড়ছে। বললুম, ‘দেখি তোর মুখে কি?’ সে সামনে এসে হাঁ করে জিব মেলে ধরলে। দেখি জিবের উপরে সেই পাথরটি। বললুম, ‘কোথায় পেলি তুই এই পাথর। দে শিগগির বের করে। গিলে ফেললে কি কাণ্ড হবে।’ এখন, সেই লোকটি যাবার সময় সব জিনিস তুলেছে, ভুলে সেই