পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
88
ঝাঁশির রাণী ।

দেখা যায় না, এইরূপ হইল। না জানি কি হইয়াছে, এই ভয়ে সকলেরই হৃৎকম্প উপস্থিত হইল। পরে, অনুসন্ধানে জানা গেল, রাজ- বাটীর সম্মুখস্থ ময়দানের বারুদ-কারখানায়, ৩০ জন পুরুষ ও আট জন স্ত্রীলোক মারা গিয়াছে এবং ৪০|৫০ জন জখম হইয়াছে। তেঁতুল গাছের ময়দানে, বারুদ কারখানার কাজ আরম্ভ হইয়াছিল। দুই মণ বারুদ প্রস্তুত হইবামা, বুরুজের নীচের তল-ঘরে লইয়া রাখা হইতেছিল। সেই কারখানায় ইংরাজের গোলা পড়িবামাত্র, বারুদে আগুন লাগে এবং তাহার সূক্ষ্মণ। সকল ধূলির মধ্যে প্রসারিত হইয়া জ্বলিয়া উঠিয়া, তদোদগত ধূম চারিদিকে পরিব্যাপ্ত হয়। অষ্টম দিবসে তুমুল যুদ্ধ আবার আরম্ভ হইল। কামান ও বন্দুকের মুহুর্মুহু ধ্বনি, শিঙ্গা, কর্ণে, ও ঝুগেলের বাদ্য যেখানে সেখানে শুনা যাইতে লাগিল। পেঁয়াতে, ধূলাতে ও নানাপ্রকার শব্দে চারিদিক আচ্ছন্ন হইয়া গেল। ইংরাজ সৈন্যের গোলাবর্ষণে ঝাঁশির অনেক সৈন্য বিনষ্ট হইল। রাত্রিতেও সহরের উপর গোলা আসিয়া পড়িতে লাগিল—তাহাতেও অনেক লোক মারা গেল, অনেকে প্রাণভয়ে গৃহ মধ্যস্থিত উৎকট স্থানে গিয়া লুকাইয়া রহিল। বপ্রস্থ গোলন্দাজ ও শিপাহী বিস্তর নিহত হইল। এই দিন রাণীঠাকুরাণীর অত্যন্ত শ্রম হইয়াছিল। চারিদিকে নজর রাখিয়া, যেখানে কিছু অভাব হইতেছিল, অমনি তৎক্ষণাৎ তিনি তাহা পূরণ করিয়া দিবার হুকুম দিতেছিলেন। তাহাতে, সৈন্যগণ উৎসাহিত হইয়া প্রবল ইংরাজ-সৈন্যের বিরুদ্ধে সমানভাবে লড়িতেছিল। ইংরাজদিগেরও পরাক্রম প্রকাশে ত্রুটি হয় নাই। কিন্তু ঝশি-সৈন্যের অপ্রতিম দৃঢ় নিশ্চয়-নিবন্ধন, ইংরাজের। ৩১ তারিখ পর্যন্ত কেল্লার মধ্যে প্রবেশলাভ করিতে পারেন নাই।”

 এই ৩১ তারিখের রাত্রিতে রাণীঠাকুরাণী একটা আশ্চর্য্য স্বপ্ন দেখেন। যেন একটা সুবেশিনী মধ্যমবয়স্কা নারী, গৌরবর্ণ, সরল