ঝিলে জঙ্গলে শিকার। . ৭৩ করে খােস মেজাজে বাহাল তবিয়তে এসে দেখা দিলেন। এক জোড়া পুরান চটি জুতার মত যে ব্যক্তি জ্বরটাকে এমন করে ঝেড়ে ফেলতে পারে তাকে ভাগ্যবান বলতে হবে বৈ কি? আমাদের হাতীর পায়ে বিশ্রী রকমের একটা কাটা ফুটেছিল; তিনি তার ডাক্তারীতে লেগে গেলেন। শোবার খাটিয়া থানা যদি ছােট হত তাহলে তিনি কোন কৌশলে আর একটার সঙ্গে জুড়ে তার ক্রটি অতি সহজে সংশােধন করে নিতেন। বিনা আড়ম্বরে তার সমস্ত লােক যাতে আরামে থাকে তার বন্দোবস্ত করতেন। কোন সাের গােল না করে শিকারীদের কাছ হতে পুরো কাজ আদায় করে নিতে তার মত এমন আর কেউ পারত না। বহু দূরে, যেখানে জনমানবের দেখা পাবার বাে নাই, এমন সব জায়গায় কি করে যে তিনি রসদ জোগাড় করতেন দেখে আহ্লাদ হত, আশ্চৰ্য্য না হয়েও থাকা যেত না।দূরত্ব সম্বন্ধে তার ধারণা ছিল অদ্ভুত রকমের। মধ্যপ্রদেশের প্রচণ্ড রৌদ্রে ভাের পাঁচটায় বেরিয়ে সেখানে পৌছতে বেলা একটা হয়ে গেল। আমার গেল পথপ্রদর্শক বলে শীতকালে সেই পথটা এক ক্রোশ আর গরমের সময় দুই ক্রোশ হয় ! শুাম রাশপেল বলে জায়গাটি পাহাড়ের ওধারে। পাহাড়ের কাছে পৌঁছতে বৈকালটা প্রায় কেটে গেল। সেখানে পেীছে রামপেলার দেখা পাওয়া গেল না ; আমাদের অগ্রসর হবার সঙ্গে সঙ্গে সেও যেন পিছিয়ে যেতে লাগল ! আমার বন্ধু বনবিভাগের এই কর্মচারীটি পথের পরিমাণ করতেন তার শারীরিক সামর্থের পরিমাণ দিয়ে। যতখানি পথ তিনি ও তার ভৃত্যবর্গ বিনা আয়াসে শান্তি না হয়ে অতিক্রম করতে পারতেন তাকে তিনি ক্রোশ গণনার মধ্যে ফেলতেন না! ছুতােরের দরকার হওয়াতে শোনা গেল তাকে ডাকতে গ্রামে লোক গিয়েছে, সে শীঘ্রই আসবে। গ্রাম শুনলাম ৫ ক্রোশ দূরে ! একটা খবর নিতে ১৪ ক্রোশ এক লােক পাঠাবার আবশ্যক হয়ে ছিল। বেলা যখন দুটো তখনও পত্রবাহক যাত্রা করলে না দেখে আমরা মনে করছিলাম এত ঢিলে দিলে ত চলবে না। তাঁকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিতে তিনি হেসে বল্লেন ভােরের মধ্যেই উত্তর নিয়ে লােক ফিরে আসবে। পরের দিন সকালে দেখলাম তার হিসাবে কোন ভুল হয় নি; আমরা যখন শিকারে বের হচ্ছি ঠিক সেই সময়ে চিঠীর জবাব নিয়ে লোেক ফিরে এল। বাইসনের খোঁজে দিনের পর দিন কত ক্রোশই আমি হেঁটেছি সে কথা আমি বলতে চাইনে। Snipe শিকার করতে গিয়ে সারাটা দিন ধরে ঘুরে মরেছি। কিন্তু এদের হাঁটবার ক্ষমতা দেখে আমি একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম! তাদের কড়াপড়া মােদের চামড়ার মত শক্ত পা দুখানা দেখে আমার হিংসে হত,—মনে করতাম ফোন যাদু মন্ত্রে আমার চরণ যুগলও যদি ঐ অবস্থা লাভ করতে পারে তবে সে অামার সৌভাগ্য। ইনস্পেক্টর ছিলেন ভাল সােয়ার, তবে সে কিন্তু শুধু তার আপন ঘােড়ার পিঠে। লাগাম জোড়াটা ঘােড়ার ঘাড়ের উপর ঢিলে হয়ে ঝুলত ; সােয়ারের এক হাতে থাক ত ছাতা আর অন্য হাতে পানের বাটা ;ঘোড়া খােস মেজাজে কখন দুলকি কখন কদমে চত। এই দুটী প্রাণীর প্রাণ কোন নিগুঢ় যােগসুত্রে বাঁধা ছিল, : একজনকে নইলে অন্য জনের আর চলত না। কিন্তু আর কেউ যদি “ব্রাউনের পিঠে সওয়ার হওয়ার স্পর্ধা করত, তবে আর তার দুর্দশার সীমা থাকত না। না বলা। কওয়া সে এমনি ছুট দিত যে তিনি অবিলম্বে ধূলায় গড়াগড়ি খেতেন। পিঠের বােঝা নামিয়ে ফেলে । “ব্রাউন” খুসী মনে শান্ত উপত্যকাভূমিতে সবুজ ঘাসের সমালােচনায় মনোনিবেশ করত। আপন মনিষের সঙ্গে ব্যবহারে কিন্তু তার কখনও কোন ব্যত্যয় হয় নি। তার বয়স হয়ে আসছে, বেশী দিন - - ১৫
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১০৭
অবয়ব