বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার।' অবিকল সােজা চলা চাই। তবেই বিপজ এড়ান যায়। গুলি না ছাড়লে ত শিকার মরে না। আর সেই সট মুহুর্তে সে সম্বন্ধে কোন দ্বিধা করা চলে না। গুলি ছুড়তেই হয়; তা তােমার লক্ষ্য যেমনই হােক কেন! গুলি ফসকে গেলেও এ সময় কাজ হয় ; কেননা শব্দ শুনে অনেক সময় বাঘ পালিয়ে যায়। কারাে ক্ষতি করবার সুবিধা পায় না। | এ সব জায়গায় বাঘ কোথাও একটা খুন খারাবী করেছে এ সংবাদ না পাওয়া গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। হত্যাকাণ্ড হয়ে গেলেও এই ধন ঘাস জঙ্গলে সে খবর জানতে দু একদিন চলে যায়। যখন দেখা যায় মস্ত মস্ত শকুন চক্র করে ঘুরে ঘুরে উড়ছে অথচ ঘাসের মধ্যে নামছে না কিম্বা ভূয়ে নেমে লাফিয়ে পালাচ্ছে না, তখনই বােঝা যায় খুনী ব্যাটি কাছাকাছি কোথাও আস্তানা নিয়েছে। এই দস্তুটিকে ফাদে ফেলবার জন্যে মাঠে গরু মােষ বেধে দিলে অনেক সময় উদ্দেশ্য সাধন হতে দেখেছি। এই উপায়ে একবার চমৎকার একটা বাধনীকে হস্তগত করা গিয়েছিল। এই হাওদা-শিকারের প্রধান বিপদ জলাভূমিতে গিয়ে পড়া। হাতীর মত সাহসী সতর্ক জন্তুও কাদায় প’বসে যাচ্ছে দেখল ভয়ে কাণ্ডজ্ঞান রহিত হয়ে যায়। একটা দৃশ্য ঠিক যেন কালকের দটনার মত আমার স্পষ্ট মনে আসছে। আমাদের হাতীর সমস্ত সারি, সংখ্যায় প্রায় পাচশটি হবে, গারো পাহাড়ের চোরাবালির মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খেতে লাগল। তারা বন্য মহিন আর জ্বাভূমির হরিণ শিকারে বেরিয়েছিলাম। পথটা মাহুতদের পরিচিত। সেটা ভূমিকম্পের পরের বৎসর। খুব সম্ভব পাহাড়ের উপরকার অলি। মাটি সৃষ্টির জলে ধুয়ে নাচ এসে পড়েছিল। যে জায়গা সবুজ ঘাসে ঢাকা সযত্ন রক্ষিত শহুলের মত মনে হয়েছিল, সেটা কয়েক হাত গভীর চোরা বাল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমরা তখনই শরবনে ঢাকা একট, জলাভূমি হতে সবে মাত্র বেরিয়ে এই সঙ্কট স্থানে এসে পড়লাম। অনতিদুরে হাত চল্লিশ ৫ ফাতে শুক্ননা ভাঙা ছিল। প্রত্যেকটা হাতী প্রাণপণ চেষ্টায় অওসর হতে লাগণ। সবাই ভয়ে চীৎকার করতে করতে চলেছিল। যাদের পিঠে হাওদা ছিল সব চেয়ে দুরবস্থা হয়েছি। তাদেরই। এই দলের মনে! শ্রীহট্ট অরণ্যবাসিনী একটা হস্তিনী সব প্রথম নিরাপদ স্থানে গিয়ে পেছিল। এই বুদ্ধিমতী বড় ড় ঘাসের বােঝা শুড়ে উপড়ে নিয়ে পায়ের তলায় বিছিয়ে পা রাখবার ঠাই করে নিতে লাগল। সকলেই নির্বিঘ্নে অপর পারে উত্তীর্ণ হল, কিন্তু এই জীবন-মৃত্যু সংগ্রামে জয়ী হবার জন্যে তাদের এতই কষ্ট আর পরিশ্রম করতে হয়েছিল সে তার পর দুদিন আর তাদের চলৎশক্তি ছিল । একটা খাল পার হতে গিয়ে রাজা—একটা হাতী হারালেন। সে পায়-ঘাটার একটু দূরে পাৰ হবার । চষ্টা করেছিল,বৃথায় ! আস্তে আস্তে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল। মাহুত শুধু প্রাণ হাতে করে সাঁতার দিয়ে অপর পারে গিয়ে উঠল। | শিকার করতে গিয়ে প্রত্যেক শিকারীর প্রধান কর্তব্য একে অপরকে প্রীও মনে সাগষ্য করা । যদিই বা শিকার নিয়ে দুর্ভাগ্যবশতঃ কোন বিবাদ বিসম্বাদ উপস্থিত হয়, তাহলে শিকারকর্তা এ সম্বন্ধে যে বিচার করেন সেইটিই সন্তুষ্টচিওে মেনে নেওয়া উচিত। নিজের ন্যায্য দাবী বরং ছেড়ে দেওয়া ভাল তবু কলহ করে মৃগয়া শিবিরের শান্তি ও সন্তোষ হানি করা কখনও উচিত নয়। একটুও মন ভারী করে নিজের নির্দিষ্ট জায়গাটা গ্রহণ কারী আর মনে কোরাে, সেইটাই তােমার পক্ষে সব চেয়ে সুবিধাজনক। স্বার্থপর, অসন্তুষ্টচিত্ত লােকেরই “পরিণামে পরিতাপ অবশ্যই ঘটে।* নির্বোধ কিম্বা মমতির প্রতি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হন না। গেল বৎসর আমারই চাক্ষুষ এই রকম একটা ব্যাপার = = - 1 |