বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ও ঝিলে জঙ্গলে শিকার হয়! বহু দিন যাবৎ তার নিদর্শন শরীর ও মন হইতে মিশায় না। জমির দখল নিয়ে অনেক দিন ধরে যখন লড়াই চলে,—আইনের অনিশ্চয়তা আর বিচারের দীর্ঘসূত্রতাই তার প্রধান কারণ--তখন দেখা বায় যোদ্ধাদের মধ্যে কেউ কেউ অস্ত্র স্বরূপে বংশ দণ্ডে বেসবল্পী জড়িয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে উপস্থিত হয় আয় নির্বিচারে চারিদিকে আস্ফালন করতে থাকে। বাবরীধারী লাঠিয়াল প্রাণ গেলেও এই অপরূপ অন্ত্রের সম্মুখীন হতে চায় না। কেননা একবার যদি অস্ত্রী তার সযত্নংরক্ষিত কেশদামের সংস্পর্শে আসে, তবে আর তার লাঞ্ছনার সীমা পরিসীমা থাকে না। এক গুলিতেই শিকার, বাপি কিম্বা চিতা, ভাল্লুক অথবা বন্য মহিষ এক গুলতে ফরসা হয়ে গিয়েছে বলতে বেশ, ভাবতেও গৌরব কম নয়। অন্তে এ অহঙ্কারটুকু করলে আমার শুনতে ভালই লাগে, কিন্তু আমার নিজের সময় সন্দেহমাত্র থাকলে এ আনন্দ আর এ গৌরব আমি শিকেয় তুলে রেখে এক গুলির চেয়ে দুই গুলি ব্যবহার করাই শ্রেয়। মনে করি। তােমায় এ “মুকলিস্” সুখসম্ভোগের আমি পরামর্শ দেব না। আমার কঁচা বুদ্ধির দিনে আমি একবার এক বাঘকে ধরাশায়ী করে সেট কে তুলে নিয়ে যাবার জন্য 'লােক ডাকতে গিয়ে ফিরে এসে দেখি, মাটীর উপর খানিকটা জমাট রক্ত রেখে সে কোথায় অন্তর্ধান হয়েছে। চারিদিকের বনবাদাড় পিটিয়ে ওলট পালট করে, সম্ভব অসম্ভব কত জায়গায় কত খুজে কোথাও আর তার দেখা পাওয়া গেল না। তার এই তিয়ােন-দুঃথ আমি এখনও ভুলতে পারি নি। এই কথাটী কখনও ভুলনা, যে শিকারকে যত শীঘ্র পার একদম মেরে ফেলতে হবে ; এতে “ক ” খরচের কৃপণতা করলে চলবে না। এ যদি করতে পার তাহলে অহত শিকার অনুসরণ করবার প্রয়ােজন হবে না। বিপদের মুখে পড়বে না; কাজেই দুঃখের কোন কারণও ঘটবে না। আহত জন্তু যে সৰ্ব্বদাই বিপদজনক হয় তা নয়, বরং অনেক সময় অতিশয় ভীরুর মতই ব্যবহার করে। আমাদের বহু পুরাতন প্রবাদে নখী, দন্তী, শৃঙ্গীকে বিশ্বাস অকর্তব্য বলে যে উপদেশ আছে সেটা মেনে চলাই ভাল। কিন্তু যতটা ব্যবধানের বিধান আছে সেটা তুমি অনায়াসেই অমান্য করতে পারি। ২৪শে নভেম্বর ১৯১৭। মেহের অলকা কল্যাণ, মাঝে আমার পত্র ব্যবহার বন্ধ হয়েছিল। তার কারণ আমি অক্টোবর মাসে ও তার পরে মৃগয়াভিশানে অরণ্য যাত্রা করেছিলাম। সেখানে শিকার লাভের সঙ্গে সঙ্গে আমার দেহে জরাসুর প্রবেশ করেছিলেন। রাজধানীর সুৎসেব্য জল বাতাসে এসে সে আমায় এম্নি পেয়ে বসল যে বহুকাল ধরে আর ছাড়তেই চাইল না। মহিষাসুর সংহার করবে আর জুরাসুর তোমায় ছেড়ে কথা কইবে এত সুখ এক কপালে লেখে না। তবু আমি বলি মহিষাসুর পরাজয়ের সৌভাগ্য যদি ঘটে তবে জরাসুর দু’চার দিন দেখা দিয়ে গেলে ক্ষতি কি? আশ্চৰ্য্য এই যে বনে জঙ্গলে নানান অসুবিধার মধ্যে যত দিন বসবাস কর ততদিন সে চুপচাপ করে থাঝে, কিন্তু যেই গৃহের অরাম ও শান্তির মধ্যে ফিরে এস অমি সে নাছােড়বান্দা হয়ে ওঠে। তাকে প্রচুর পরিমাণে কুইনীন ভােগ আর স্বয়ং কিঞ্চিৎ বিশ্রাম সুখ উপভােগ করুলেই তার প্রকোপ দূর হয়। দুঃখের অভিজ্ঞতা হতে যে জ্ঞান সঞ্চয় হয়েছে তাতে এখন