বিলে জঙ্গলে শিকা। সাবধানতা আমার জ্ঞানে ছিল সব প্রয়ােগ করে অতি ধীরে নিঃশব্দে মাচান ত বাপ হল। আমরা রাত ন’টা পর্যন্ত সেখানে প্রতীক্ষা করে বসে রইলাম। সে তখনও দেখা দিলে না। সারা রাতের মধ্যে একটি বারও এল না। পর দিন ক্রোশ খানেক দূরে “পথহারা” একটী মহিষশাবক হত্যা করেছে অনে, আর অত সামান্য পরিমাণ কোমল মাংসে তাহার উদর ও আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবেন—বিশেষতঃ পূৰ্ব্ব রাত্রে সে উপবাসী ছিল—জেনে, আমরা তারই কাছে একটা প্রায়-বৃদ্ধ মহিষ বন্ধন করলাম। এটী হত্যা হল, কিন্তু এমনি মরা গিট দিয়ে বাঁধা ছিল পাশব বল প্রয়োগ করেও বাঘ সেটীকে পাদমেকং নড়াতে পারে নি। শাবকটর মস্তক আর দুই একখানি অস্থি তিন্ন সমস্তই সে সমাধা করেছিল। বড়টী যেখানে বাধা ছিল তারই হাত দশেক দূরে এ সব পড়ে ছিল। মাচান যেখানে বাধা হল সেখান হতে বৃদ্ধ মহিষটীর মৃত দেহ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। বাঘ যদি দয়া করে সে পথে আসত তার পালাবার আর কোন পথ ছিল না। “ভ্রান্তি বিনােদ” (Comedy of Errors ) তখনও সাঙ্গ হয় নি। মহিষশিশুর আমিষ তোজ কতকটা সে পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিল। চোখে না দেখে কাণেশােনার উপর নির্ভর করে কাজ করলে এম প্রমাদ ঘটবারই সম্ভাবনা। আমার ভ্রান্তি বিনােদের এই দ্বিতীয় অঙ্ক। | এ কথা যদি আগে জানা থাকত তাহলে তার পাশে মাচান বাঁধালেই চলত; কিম্বা বৃদ্ধ মহিষকে শাবকের পাশে স্থান দিলেই হত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাহলে বাঘ একটার সন্ধানে অন্যটীর সন্নিধানে এসে উপস্থিত হত। সাতটার কিছু পরে এক জোড়া পাখী আমার মাচানের কাছে ডাকতে আরম্ভ করলে। দুধারে দুটার সুর সাধনা চল। আমার মনে হল, মাচান বাধার শব্দ যদি বাঘের কাণে গিয়েও থাকে তাহলেও এই গানের সুরে তার সব সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর বাঁদিক হতে একটা রাত্রিচর পাখী বলে উঠল, “হুসিয়ার হুসিয়ার।” অনতি বিলম্বে শৰ্দল-প্রবরের সাবধান গুরু পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গেই তার বীরদর্পের কণ্ঠস্বর কর্ণগোচর হ’ল। কাছে, আরাে কাছে এগিয়ে অাবার পর প্রথমে হাড়ের মালা নাড়া দেবার মত একটা খড় খড় আওয়াজে বুঝলাম মহিষ শাবকের ভুক্তাৰশিষ্ট অস্থি মাংসের পাশ পরিবর্তন হচ্চে। তাহার পরেই আহারের মচ মচ মচ, মচ, শব্দ, মাঝে মাঝে অর্ধ মাত্রা, সিকি মাত্রার বিরাম। সে সময় শুষ্ক অস্থিখণ্ড চর্বণ ত্যাগ করে, রসাল স্বাদু মাংসের গ্রাসে মুখবিবর পুর্ণ করা হচ্ছিল আর কি, হাত ঘড়িতে দেখলাম ঠিক একটা ঘণ্টা এই ভােজন ব্যাপার চলল। সেখানে বসে সে এই ভােজন কার্যে নিবিষ্ট ছিল তা শুধু আমি কাণে শােনা হতেই অনুমান করেছিলাম, চোখে দেখতে পাই নি। আমার মাচান যেখানটীতে ছিল সেখান হতে বহু চেষ্টা, অনেক উকি ঝুকি মেরেও এই ডোরাকাটা প্রাণীটীর কিছুই দেখা ঘটে ওঠে নি। এক ঘণ্টা পরে আহার সমাধা করে পরিতৃপ্ত ব্যারাজ স্বীয় অভীষ্ট পথে যাত্রা করলেন। তার সঙ্গে এ উৎকণ্ঠিতের আর সাক্ষাৎ হল না। প্রথমে মনে করেছিলাম বুঝি আহার শেষে আচমনে কি জলপানে গিয়েছেন। আমি “পুনর, দর্শনায় বসে রহিলাম।। ফিরে এলেন বটে কিন্তু প্রথমের কাছে নয়। দ্বিতীয়ের কাছে ফিরে এসে শয্যা গ্রহণ করলেন। তার শান্তিদ্যোতক জুগুণ শব্দ কর্ণগােচর হল। যদিও আমি প্রহরার্দ কাল ব্যাকুল চিত্তে প্রতীক্ষা করে , রইলাম কিন্তু একটাও রাজকটাক্ষ প্রথমের দিকে পতিত হল না। তৎক্ষণে কিম্বা তৎপরে কখনই হয় নি। ভােগ্য বস্তু তিনি আর কখনও স্পর্শ করেন নি। .
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৫১
অবয়ব