ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ' ৩৭। করে কেন। আত্ম রক্ষা করা তার পক্ষ দুর্ঘট হয়ে উঠল। মনের দুঃখে সে ঘর ছেড়ে বনে গেল। অনাহারে অনিদ্রায় শান্ত ক্লান্ত ক্ষুৎক্ষাম পীড়িত কঙ্কালসার পাণ্ডুবর্ণ ! জঠরজ্বালা দুর হলে মনের সুখে বেড়াল যেমন গরগরূ শব্দ করে তাই শুনে গাছের আবডাল হতে গলায় ধামার হাঁসুলি পরা বেড়াল দেখে কি, তিষ্টা বাঘের বাচ্চা বাপমায়ের শিকার করে আনা মাংসে উদর পূরণ করে এই আনন্দ ধ্বনি করূছে। হাঁসুলি-ধারী এই অদ্ভুত জীবটিকে দেখে তারা ভীত হয়ে পড়ল। ইত্যবসরে চতুর বেড়াল ভুক্তাবশিষ্ট যা ছিল তা সাঙ্গ করে ফেললে। প্রতি দিনই এই ব্যাপার চলতে লাগল। এদিকে ব্যাশিশুদের অনাহারে দিন দিন শুকিয়ে ম্যালেরিয়া রােগীর মত হাত পা নলি নলি অাকারের হচ্ছে দেখে ব্যাঘী এক দিন স্বামীকে বলে—“দেখত বাছাদের দশ”! নিশ্চয়ই কেউ এসে এদের মুখের গ্রাস কেড়ে খাচ্ছে। খবর নিতে হবে।” তাহারা লুকিয়ে পাহারা দিতে লাগল। বিড়ালটি অভ্যাসমত পরদিন যেমন এসে খেতে যাবে আর কি এমন সময় রাগে অন্ধ ও বধির হয়ে গর্জন আস্ফালন করূতে করতে বাবা বাঘ তাকে তাড়া করূলে। আগে আগে ধামারী বিড়াল পশ্চাতে ববি ছুটে চলেছে। দৌড়াতে দৌড়তে একটা গাছের কাছে আসা মাত্র বিছাল ত চড়ে পড়ল। বােকা বাব না ভেবে চিন্তে যেমনি চড়তে গেছে, গাছের ফাসায় অটিক পড়ে দম ফেটে মরে গেল। বিড়াল গাছ হতে নেমে পা টিপে টিপে চুপিচুপি এসে পরখ করে যখন দেখলে বাবটা নির্ঘাত মরেছে তখন বাঘিনী আর ছানাগুলি যেখানে পথ চেয়ে পড়েছিল বীরদর্পে দেইখানেই গিয়ে উপস্থিত হ’ল। বাবের মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে বাঘিনীকে বলে, “দেখ, তুই যদি আমায় ভালয় ভালয় নিকে, করি ত কর, নয়ত ভোর কাচ্চাবাচ্চ। শুদ্ধ তোকেও সাবাড় কছি।” বাঘ ফিছে না দেখে বাঘিনী প্রমাদ গণলে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখে কি বাঘ মরে কাঠ হয়ে পড়ে আছে। তখন বেচারা আর কি করে অগত্যা নিকে করলে ! তার দিন সুখেই কাটতে লাগল। বিড়াল কিন্তু বুঝলে বিপদ সম্মুখে। ব্যাথশিশুগুলি বাল্য অতিক্রম করে যৌবনে পদার্পণ করছে। সংবাপের সঙ্গে তারা যে ভাবে আমােদ প্রমােদ সুরু করূলে তাদের পক্ষে খেলা হলেও এর মৃত্যু তুণ্য হয়ে উঠল। এ আর এক কোপে মরা পড়া নয়, তিলে তিলে মরা। ভালবাসার সম্বর্ধনাই মৃত্যুর কারণ হল। এই সঙ্কট সন্ধিক্ষণে বনের মধ্যে বর্ষা এসে দেখা দিল। এ সময়টা অরণ্য জীবের পক্ষে দুঃসময়—শিকার মেলা ভার, খাদ্যের অভাব। গৃহিণীকে বুঝিয়ে পড়িয়ে অত্র যাবার জন্যে রাজী করালে। বল্লে নদীর অন্য পারে আহারাদি সুপ্রতুল। ব্যাঘ্র সম্মত হয়ে নদীর ধারে এল। সাঁতার দিয়ে ওপারে যাবে। বিড়াল বলে, “গিন্নি তুমি এগেও আমি তােমার পিছু পিছু যাব”। সেই পুরাণগানের মত, “ধীরে ধীরে যাও কালাচাদ আমি তোমার সঙ্গে যাব”। মা জলে নামছে দেখে ছেলে মেয়েরাও সঙ্গে সঙ্গে নামল। জলের তোড়ে ভাসতে ভাসতে শেষে ডুবেল। বুদ্ধিমান বিড়াল নিরাপদে তীরে দাঁড়িয়ে এই দুর্ঘটনা স্বচক্ষে দেখলে। অতঃপর অবিলম্বে পুনরায় গ্রামে ফিরে গেল। পুরাতন পরিচিত স্থানে দিন সুখেই কাটতে লাগল। আত্মরক্ষার্থে গাছে চড়বার সময়ই ইতিপূৰ্ব্বে ধাক্কা লেগে ধামাটি কচ্যুত হয়ে ভূমিসাৎ হয়েছিল। তা না হলে এমন বুরাভরুণ ., সজ্জিত হয়ে দাড়ালে স্বয়ধরায় ব্যাঘাত ঘটত। গল্পটি বানিয়ে বলে আবার উপসংহারে তার একটি নীতি যােজনা করে দেব, আমি শিকারী আমার সে কাজ নয়। [ ] । ।
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৫৫
অবয়ব