ঝিলে জলে শিকার বেরিয়ে যে পথে বাঘ চলে গিয়েছে সে পথ পরখ করতে আরম্ভ করলাম। বাঘ মােটেই বাহিরে যায় নি। আরো একটু তত্ত্ব তয়াসে জানা গেল যে লােকটা বাঘের পথ আটকাবার জন্য দাঁড়িয়েছিল সে তখনও সেইখানটীতে আছে। বাঘটি এমনি চুপি চুপি তালগাছের কাছে এসেছিল যে চলে না। যাওয়া পর্যন্ত সে কথা সে টেরই পায় নি। আর তার পর যখন চলে গেছে তখন মৌনাবলম্বন নিরাপদ বােধে নিঃশব্দে ছিল। আমরা যত দুর দেখতে পাচ্ছিলাম তত দূর অনুসন্ধান আর আবিষ্কার দুই সহজ হয়ে সে ছল। আমরা সাবধানে এগিয়ে এসে এক নজরে স্পষ্ট দেখতে পেলাম,দেখলাম বাঘটি কাপড়ের বাণ্ডিলের মত জড়সড় হয়ে পড়ে আছে,একেবারে নড় চড় নেই, পাষাপের মত প্রাণহীন, গুলিটা তার বা কাশের গােয় লেগেছে ! হাতফকে এমন জিত আর কখনও হয় নাই। • সপ্তাহের শেষে ছুটির দু’দিন শিকার চেষ্টায় দেশের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। যে লােকটি আমার বন্দুক সব পরিষ্কার করে রাখে তার ভুলে দুটী দিন মাটি হয়ে গেল। চারশ পয়ষট্টি নম্বর গুলির বন্দুক দিয়ে সে ৪০০/৫০০ নম্বরের গুলির বন্দুক দিয়েছিল। এ দুটি বন্দুক এক জুড়ি যমজ ভাইএর মত ; একটিকে অন্যটা হতে চিনে নেওয়া দুষ্কর। আমারও দোষ কতকটা যে ছিল না তা নয়। প্রতিবারই আমি সব নিজে চোখে দেখে নি, এবারে আর তা করি নি। খবর এল বাঘ গরু মেরেছে, আমিও যাবার জন্য তৈরি হলাম। বন্দুক নিতে গিয়ে নির্বোধের মত এই ভুল আবিষ্কার হল। তখন আর কি করা যায়, ফিরে আসতে হল। দুঃখের ফিরে আসা ! যদিও মানুষটি যেমন গিয়েছিল তার চেয়ে অনেক জ্ঞানী হয়েই ফিরে এল। এক পক্ষ কাল ব্যাঘ্রীর মনের আননে খুনখারাপি, ডাকাতি করে বেড়াতে লাগলেন। আরও কতকগুলি গরু মার: পড়ল। তার পর আবার আমি যখন গিয়ে উপস্থিত হলাম, আগের রাতে বৃষ্টি হবার দরুণ ভিজে পথে পায়ের দাগ খুজে পাওয়া আরও সহজ হল। যারা তার খোঁজে ফিরছিল, তারা বল্লে হাজার হউক বাঘতে আর আকাশে পা করে হাঁটৰে না, অনায়াসেই তার খবর নিয়ে আসব। হলও তাই। শ্যাওলা আর জলেভরা পুরাণ খালের ধারে একটা বেতনে তার সন্ধান পাওয়া গেল। সহজে জলে নামবার তার সম্ভাবনা ছিল না। তাই খালের ধারে ধারে তাকে ঘেরাও করবার বন্দোবস্ত করা গেল। বাঘটি ঠিক এ পথ পেরিয়ে যায় নি। একটি গাছের শিকড়ের কাছাকাছি গুড়ি সুড়ি হয়ে লুকিয়ে বসেছিল। তার পর শেওলা পেরিয়ে জল সাঁতরে একটি ছােট্ট দ্বীপের উপর গিয়ে আশ্রয় নিলে। যেখানে গিয়ে শক্ত হয়ে সে বসেছিল সেখান হতে তাকে নড়ান শক্ত হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু অবশেষে গজরা মােহনলাল আর সমস্ত শিকারীর ছলবল কৌশল একত্রিত হওয়ায় নড়তে তাকে হাই। আমি আর ডান দিকে চেয়ে দেখলাম সেই দিকটাই তার পলায়নের প্রকৃষ্ট পন্থা মনে হয়েছিল। কিন্তু আমি যা মনে করেছিলাম আর যেটা সচরাচর ঘটে থাকে তা হলনা। সে দক্ষিণ মাৰ্গ ত্যাগ করে বাম মার্গের পথিক হল। তাই আমার গুলি একদম ফসকে গেণ। বলা পড়ে গিয়েছিল বলে সন্ধ্যার অন্ধকারে পার হয়ে এল। আমরা দুঃখিত মনে • অথচ আশার নর্ভর করে পর দিনের প্রতীক্ষায় রইলাম। | নিশাচর বৃত্তি চরিতার্থ করবার সময় সে কি শুধু কৌতুহল পরবশ হয়েই আমরা পূর্ব দিন যেখানে টুল নিয়ে পাহারায় বসেছিলাম সেই জায়গাটি পরিদর্শন করতে এসেছিল? চলাপথ একটু তফাতে •
পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭৪
অবয়ব