বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬ . ঝিলে জঙ্গলে শিকার। একটী মহিষ মেরেছে। গিয়ে দুটি চিতার পায়ের দাগ আবিষ্কার হল। আর দেখতে পেলাম নিহত মহিষের অতি অল্প অংশই তারা আহার করেছে। বন্য কুকুরের আবির্ভাবে বুঝতে পারলাম ব্যাযুগল আর শম্বর হরিণ প্রভৃতি সকলেই বনের সে অঞ্চল ত্যাগ করে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এ ব্যাপারে শিকার সম্বন্ধে আশা এক রকম নিরাশায় পরিণত হল। হাতে অন্য কাজ না থাকায় ঠিক হল রাতের প্রথম ভাগটা আমি কিছুক্ষণ পাহারায় বসব। গরুর গাড়ীর রাস্তার ধারে যেখানে নিহত মহিষটী পড়েছিল তার পশ্চিমে বিস্তৃত জলাশয়। যে মহুয়া গাছে মাচান বাধা হয়েছিল তার ডালগুলি তখন ফুলেফলে আচ্ছন্ন। তীব্র গন্ধে নেশা না হক কষ্ট বােধ হচ্ছিল। রাত প্রায় আটটায় একটা ভালুক আমার ডান ধার হতে ক্ষণে ক্ষণে হু হু শব্দ করতে করতে জলাশয়ের দিকে গেল। অন্ধকার রাত। আন্দাজে বুঝলাম ভালুকটী আমার পিছনে প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে রয়েছে। কিছুক্ষণ ধরে শালবনের শুফপাতার মধ্য দিয়ে আর একটী জন্তু আমার ডান দিকে এল বুঝতে পারলাম। প্রথমে আমি মনে করলাম দেবাৎ বুঝি একটী বাঘ সে দিকে এসে পড়েছে। গুরু পদক্ষেপ হলেও, বাঘের সাবধান মখমলের মত নরম পায়ের শব্দ নয়। জন্তুটি যতই চলাফেরা করতে লাগল আমার বিস্ময় ততই বেড়ে চলল। গাছের আড়ালের জন্যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। মনে হল যেই হউক সে মৃত জন্তুটীর কাছে এগিয়ে আসূতে চাইলেও কি একটা কারণে সতর্কভাব রয়েছে। দুচার মিনিট গেল, কিন্তু মনে হল সময় যেন আর শেষই হচ্ছে না। এদিকে অদৃশ্য জন্তুটীর গতিবিধির কোন পরিবর্তন লক্ষিত হল না। রহস্য ক্রমেই গভীরতর হয়ে চলল। নিরাকরণের সমস্ত আশা ত্যাগ করেছি, এমন সময় প্রকাণ্ড একটা জন্তু মােযটার উপর গিয়ে পড়ল। তার নিবিড় কৃষ্ণবর্ণ তার পরিচয় প্রকাশ করলে। সে গিয়ে খুব জোরে একবার মােষটাকে টানলে। বাঁধনদড়ি শক্ত, খুলে যাওয়া দূরে যা উটে তাকেই টান দিতে সে চমকে উঠল। ভয় পেয়ে সে আড়াল হতে একেবারে খােলা জায়গায় গরুর গাড়ীর রাস্তার উপর লােির পড়ল। আর কালবিলম্ব না করে বার বার মােযটার উপর গিয়ে পড়ে সেটাকে টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু পারলে না। এতক্ষণে অভিনয়ের অভিনবত্ব চলে গিয়েছিল। তিন চার বার চোখের সম্মুখে লম্ফঝম্প করবার পর আমি আমার Paradox গুলি করলাম। সে পড়ে গেল। কিন্তু একটু পরেই উঠে জলাশয়ের ঘাসে ঢাকা। পড়ে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল। দ্বিতীয় গুলিটা তার লাগল না মনে হল। অপেক্ষা করে কোন লাভ । নেই দেখে আমি সঙ্কেত বাঁশী বাজালাম। লােকজন লণ্ঠন নিয়ে এল। আমি বাংলার দিকে গেলাম। বনবিভাগের কর্মচারী আমার বন্ধু গুলির আওয়াজ শুনেছিলেন। কি হল জানবার জন্যে পথে আমার সঙ্গে দেখা করবার জন্যে এগিয়ে এসেছিলেন। সকাল হবার আগে জানার উপায় ছিল না। তখন যা জানা গেল সে আর এক আশ্চর্য ব্যাপার! খুব ভােরে উঠে তাড়াতাড়ি আমরা তদারকে বেরুলাম। আমার বন্ধু আর একটি নূতন ভাল্লুকের পায়ের চিহ্ন দেখালেন। সে জলাশয়ের অপর দিক হতে মৃত মহিষের মাংস ভক্ষণের চেষ্টায় এসেছিল। তাই দেখে প্লেন খুব সম্ভব আমার দ্বিতীর গুলিটা ফস্কে গিয়েছে। হা' কখানি ছাড়া বিপুল মহিষদেহের অ র বড় কিছু অবশিষ্ট ছিল না। আমি কিন্তু যে দিকে আমার লুকটি পড়েছিলো সেই দিক তল্পাস গেলাম মাটিতে রক্তের চিহ্ন আবিষ্কার করে আমার মনে কুর্তির উদয় হল। বনবিভাগের কর্মচারী আর আমি তখন দ্বিতীয় অতিথির পদানুসরণ করে