পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৪ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা আপনিই দায়িত্ব বহন করি, অন্যের উপর দায়িত্ব স্থাপন করি না । দেখ ইউরোপ এক সময়ে পোপের মুখাপেক্ষী হইয়া স্বীয় দায়িত্বহীন হইয়। অন্ধকারে ডুবিয়াছিল। পোপের মুখের কথাই প্রায় তাহার মুক্তি স্বরূপ ছিল । তাহাতে ইউরোপ দিন দিন অবনত হইয়া পড়িতেছিল কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় শীঘ্রই পোপের আধিপত্য লুপ্ত হইল। ইউরোপও স্বীয় দায়িত্বের প্রভায় প্রতিষ্ঠিত হইয়া কত না স্বাধীনতা লাভ করিল। পুনশ্চ এই যে ইংরাজ জাতি দেশ বিদেশে আধিপত্য স্থাপন করিয়া প্রভূত সম্পদ লাভ করিয়াছেন তাহার প্রধান হেতু কি ? প্রধান হেতু এই যে, ইংরাজ আপনার দায়িত্ব খুব বুঝিয়াছেন। র্তাহারা zoz'ss 2–"England expects every man to do his duty” “ইংলণ্ড চান প্রত্যেক মনুষ্য তাহার অাপন আপন কৰ্ম্ম করুক” । অামরাও আমাদের দেশের পূর্ব পুরুষদিগের অতি নিগৃঢ় দায়িত্ব সম্বন্ধে আধ্যাত্মিক ধ্বনি পাই—“আত্মৈব নিয়তো বন্ধুঃ আত্মৈব নিয়তো রিপুং” । তাহারা নিজের দায়িত্ব বেশ রীতিমত বুঝিতেন এবং তদনুসারে স্বীয় দোষ মালিন্য সকল প্রক্ষালিত করিয়া কৃতকৃতাৰ্থ হইতেন । এইরূপে সকল দিক হইতেই দেখিতে পাই যে, মানুষের দায়িত্ব মানুষ নিজের উপরে গ্রহণ না করিলে তাহার উন্নতির আশা নাই। যত আমরা নিজের দায়িত্ব পরের স্কন্ধে না চাপাইয়া নিজের উপর চাপাইতে কুষ্ঠিত না হইব তত আমাদের উন্নতির পথ প্রশস্ত হইবে। আমরা হৃষ্ট পুষ্ট বলিষ্ঠ হইয়া যথার্থ মনুষ্যত্ব লাভে সক্ষম হইব । - so -- * চিকিৎসা । (ভক্তিভাজন শ্ৰীযুক্ত বাবু দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক কম্বুলিয়াটোলা পাঠ্যসমিতির অধিবেশনে পঠিত ) আমি অদ্য একটি অসমসাহসিক কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছি। যে ক্ষুদ্র প্রবন্ধখানি হস্তে করিয়া এখানে আমি আজ আপনাদের সমক্ষে দণ্ডায়মান হইয়াছি, তাহার নাম “সামাজিক রোগের কবিরাজি চিকিৎসা ।” একে তো চিকিৎসা মাত্রই অন্ধকারে ঢেলা নিক্ষেপ ; তাহাতে আবার কবিরাজি চিকিৎসা—উনবিংশ-শতাব্দীয় বিজ্ঞানের প্রখর রশ্মি আজ পর্য্যন্ত যাহার গবাক্ষ ভেদ করিতে পারে নাই ! তাহাতে আবার সামাজিক রোগের চিকিৎসা— যাহার গহন অরণ্যে মহা মহা বিজ্ঞানবিৎ পণ্ডিতেরা অন্ধকারে দিশা-হারা হইয়া কোথাও তাহার অন্ধি-সন্ধি খুজিয়া পা’ন না ! একে চিকিৎসা—তাহাতে কবিরাজি চিকিৎসা—তাহাতে আবার সামাজিক রোগের চিকিৎসা ! একে রজনী দ্বিপ্রহর —তিথি তায় অমাবস্যা—ঋতু তায় মেঘাচ্ছন্ন বর্ষ। ! কিন্তু হইলে হইবে কি— আমি এখন মাঝ-গঙ্গায় উপস্থিত ! আমি৷ হইতে এ পারও যত দূর, ও-পারও তত দূর ! এখন আমার পক্ষে এগোনোও যা—পিছোনোও তা ; বিপদ দুয়েতেই সমান ! এসময়ে পিছোনো লাভে-হইতে কেবল কলঙ্কের ভাগী হওয়া ! এখন কর্তব্য কি ? ঢেউ দেখিয়া লা ডুবানে কর্তব্য—না শক্ত করিয়া হাল ধরিয়া থাকিয়া গন্তব্য কুলের দিকে প্রাণপণে অগ্রসর হওয়া কর্তব্য ? এগোনোই কর্তব্য—তাহাতে আর সন্দেহ নাই !