পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৩ মোহান্ধ সংসারী ব্যক্তির প্রাণের অবস্থা অপেক্ষা অধিকতর যাতনাময়। মুমুক্ষু ব্যক্তি প্রাণ হইতে সর্বপ্রকার সাংসারিক অনিত্য সুখ বা তাহার অাশাকে বিদায় দিয়াছে। এক্ষণে তাহার প্রাণে শূন্যতা পূর্ণ করিবার জন্য সে ব্যাকুল ভাবে ঈশ্বরের নিকটে কৃপা প্রার্থনা করিতেছে, সুতরাং তাহার প্রাণে নীরসতা-জনিত যাতনা আসিয়াছে। পাপান্ধ ব্যক্তি যতদিন পাপলব্ধ সুখকে অনিত্য বলিয়া বুঝিতে না পারে ততদিন পাপ ত্যাগ করে না, সুতরাং নিত্য সুখ ব্রহ্মানন্দ লাভে তাহার বিলম্ব ঘটে । মুমুক্কু র্যক্তি শীঘ্ৰ ব্ৰহ্মানন্দ পায় বটে কিন্তু ব্রহ্মানন্দ প্রাপ্তির পূর্বে অল্প । সময়ের মধ্যে তাছাকে প্রাণে অধিক নীর- ; কোন বিষয় ধরিয়া থাকুক না, সে কখনই সতী মহা করিতে হয় । পাপান্ধ ব্যক্তি শীঘ্ৰ ব্ৰহ্মানন্দ পায় না কিন্তু পাপলব্ধ অনিত্য সুখ দ্বারা মাঝে মাঝে তাহার প্রাণ সরস থাকে। অন্য দিকে একজন কৃষক পাচটী টাকা লাভ করিতে পারিলে তাহার প্রাণে যে পরিমাণে সুখের উদয় হয়, একজন সম্রাটের হয়ত একটী রাজ্যলাভ হইলে সেই পরিমাণ সুখ হয় না। আবার কৃষকের পাচটী টাকা লাভ করিতে হইলে যে পরিমাণে ক্লেশ সহ্য করিতে হয় সম্রাটেরও একটী রাজ্য লাভ করিতে হইলে সেই পরিমাণে কষ্ট সহ্য করিতে হয় ! একটা কুষ্ঠরোগগ্ৰস্ত ব্যক্তি একটা মাত্র টাকা অর্জন করিতে পারিলে যেরূপ সুখী হয় একজন নীরোগ সুস্থ ব্যক্তি এক সহস্র টাকা অর্জন করিতে পারিলে সেরূপ সুখী হইতে পারে না। অবস্থাভেদে এক বিষয় হইতে আমাদিগের অন্তঃকরণে বিভিন্ন প্রকার ভাবের উদয় হয়, সুতরাং অবস্থা বৈচিত্র দ্বারাও মুখ ও দুঃখের তত্ত্ববোধিনী পত্রিক १e कछ, ७ छन সুখ ও দুঃখ দ্বারাই যখন আমরা ভাগ্যের পরিমাণ করি তখন অবস্থা বিভিন্ন প্রকার হইলেও কোন ক্ষতি হয় না, ফলতঃ ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি সকলের উপর সমান ভাবে পতিত হইতেছে, ইহা স্পষ্টরূপে দেখিতে পাওয়া যায়। এই সময়ে জগতে আর অলসতা দেখিতে পাওয়া যায় না । স্বয়ং ঈশ্বর যে স্থানের নিয়ন্তা, সেস্থানে কে অলস থাকিতে পারে ? জ্ঞানের খৰ্ব্বতা বশতঃ আমরা অলসতার ভয় করি, কিন্তু দয়াময় ঈশ্বর এরূপ কৌশলে এই জগৎ স্বষ্টি করিয়াছেন যে মনুষ্য যদি স্বয়ং ঈশ্বরকে ধরিয়া থাকে, তাহা হইলেই সে স্থির হইতে পারে, নতুবা সে অন্য যে স্থির থাকিতে পারিবে না । অশান্তিরূপ অগ্নিদ্বারা তাছার প্রাণ দগ্ধ হইবেই। সুতরাং মনুষ্য ঈশ্বরকে ছাড়িয়া ধনী হউক বা মানী হউক, রাজা হউক বা প্রজা হউক যে অবস্থায় থাকুক, তাহার শান্তি নাই । তাহার প্রাণ শীতল করিবার একটা উপায় নিৰ্দ্ধারণ না করিলে নিস্তার নাই। এইরূপে যে যেখানে থাকুক, করুণাময় পরমেশ্বরের নিয়ম ক্রমে বিলম্বে বা অবিলম্বে সে র্তাহারই পদচ্ছায়ায় উপস্থিত হইয়া সংসারতপ্ত হৃদয়কে শীতল করে । অজ্ঞানতা নিবন্ধন আমরা সুখ শান্তির নিলয়ে একবারে উপস্থিত হইতে পারি না, কিন্তু ঘুরিয়া ফিরিয়া অবশেষে স্থখস্বরূপ দয়াময় ঈশ্বরের কৃপায় তাহারই দ্বারস্থ হই । ফলত সাধু, অসাধু, ধনী দরিদ্র, জ্ঞানী, অজ্ঞান, কৰ্ম্মী অকৰ্ম্মী সকল ব্যক্তিই এক নিয়ম সূত্রে গ্রথিত । এক্ষণে এক প্রশ্ন হইতে পারে, মানবাত্মার স্বাধীনতা যদি বাস্তবিক নাই, তাহ পরিমাণ জগতে সমান থাকিতে পারে। } হইলে ঈশ্বর কি কারণে আমাদিগের হৃদয়ে