পাতা:তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (ত্রয়োদশ কল্প প্রথম খণ্ড).pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০২

  • -*m

বিজ্ঞানাত্মার স্রষ্টা, পাতা প্রতিষ্ঠা । বিজ্ঞানাত্মাই বিজ্ঞানময় কোষ এবং সেই বিজ্ঞানময় কোষের মধ্যে অন্তর্যামীরূপে তাহার প্রতিষ্ঠা আনন্দময় পূর্ণপুরুষ রহিয়াছেন । “হিরন্ময়ে পরে কোষে বিরজং ব্ৰহ্ম নিষ্কলং” বিজ্ঞানজ্যোতিৰ্ম্ময় কোষে নিৰ্ম্মল নিরবয়ব ব্রহ্ম বিরাজমান আছেন । জ্ঞানেন্দ্রিয় কৰ্ম্মেন্দ্রিয় দিয়া ঈশ্বর মনুম্যের শরীর কি সুন্দর রূপে গঠন করিয়া দিলেন। স্ত্রীপুরুষের যে শরীর, সে কি সুন্দর । ঈশ্বরের ইহা ও ইচ্ছা যে র্তাহার স্বষ্টিতে সৌন্দর্য্য বর্ষণ করিবেন,তাই তিনি সৌন্দৰ্য্য বর্ষণ করিলেন। সূৰ্য্য চন্দ্র দেখ, বৃক্ষ লতা দেখ, অশ্ব প্রভৃতি পশু দেখ, কি সৌন্দর্য্য ছাইয়া রহিয়াছে । সকলের অপেক্ষা মনুষ্যের—স্ত্রীপুরুষের শরীরে দেখ, কি অনুপম সৌন্দৰ্য্য দিয়াছেন । আবার শরীরকে কেমন তাত্মার উপযোগী করিয়াছেন ; সেই উপযোগিতা ভাবিতে গেলে আশ্চৰ্য্য হইতে হয় । হস্তের একটা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ না থাকিলে হস্তের কার্য্য অতি সংক্ষেপ হইয়া পড়িত। জন্তুর তৃণগুল্ম তাহার করিবে, তাহাদের মস্তক নিম্নমুখ হওয়া আবশ্যক, তাই তাহাদিগের মস্তক নিম্নমুখ হইল ; কিন্তু মনুষ্যের চক্ষু উপরের দিকে চাহিবে, দেখিবে অনন্ত আকাশ, তাই ঈশ্বর মনুষ্যের শরীর জ্ঞানের উপযুক্ত উন্নত শরীর করিয়া দিয়া (豆ーII জ্ঞান বলিলেই তাহার ইচ্ছা চাই— জ্ঞানের শক্তি ইচ্ছা । জড়ের শক্তি কাৰ্য্যকারণে বদ্ধ হইয়া গতিতে প্রকাশ পায়, কিন্তু জ্ঞানের শক্তি ইচ্ছা । এই ইচ্ছা লাভ করাতে মানুষ স্বাধীন হইয়া গিয়াছে । প্রকৃতির ইচ্ছা নাই। প্রথমে প্রাণপঙ্ক (protoplasm) স্বস্ট হইল, তাহার পরে বৃক্ষ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা ১৩ কল্প, ১ ভাগ লতা স্বস্ট হইল ; পরে জলজন্তু পশুপক্ষীর স্বষ্টি হইল। এইরূপে ক্রমে প্রথম মনুষ্য স্ত্রীপুরুষ স্বস্ট হইল। যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা আপনাদিগকে পোষণ করিতে না পারিয়াছিল, যতক্ষণ তাহারা স্বীয় ইচ্ছামতে কার্য্য করিতে অক্ষম ছিল ততক্ষণ পৃথিবীই তাহাদিগের মাতা ছিল। যখন তাহাদিগের শরীর উপযুক্ত হইল, তখন তাহারা আপনাদিগের ইচ্ছানুসারে কাৰ্য্য করিতে লাগিল ; আপনার অভাব আপনাকেই পূরণ করিতে হইল। ঈশ্বর প্রথমে এমন স্থানে মানুষকে স্বষ্টি করিয়াছিলেন, যেখানে প্রচুর ফল বিদ্যমান ছিল । যখন সেই প্রথম মনুষ্যের জ্ঞান প্রস্ফুটিত হইল, যখন “আমি বলিয়া জানিল, তখন সে আপনার ইচ্ছানুসারে ফল তাহরণ করিতে লাগিল । ক্রমে বিজ্ঞানের প্রভাবে বুদ্ধি চালনা করিয়া সকল অভাব পূরণ করিতে লাগিল ; ক্রমে ক্রমে জ্ঞানের স্ফৰ্ত্তি হইতে লাগিল । প্রথমে সে ফল মূল খাইয়া পুষ্ট হইল, তাহার পরে তাহাকে পশুদিগের সহিত সঙ্গাম করিয়া আহার সংগ্ৰহ করিতে হইল। এমন স্তর দেখা গিয়াছে, যেখানে সকল প্রকার সংসারের প্রয়োজনীয় উপকরণই প্রস্তর নিৰ্ম্মিত— এইখানে দেখিতেছি বিজ্ঞানের কার্য্য ভালরূপ আরম্ভ হইয়াছে। ক্রমে ক্রমে বিজ্ঞানের উন্নতি হইয়াছে। এই প্রস্তরস্তরের অনেক পরে লৌহ-অস্ত্র পাওয়া গিয়াছে, সুতরাং তখন অগ্নির আবিষ্কার হইয়াছে। মানুষ এই অবস্থায় অনেক উন্নত হইয়াছে। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ হরি ওঁ।

  • o